এমন সব পোস্টেই মেতে রইল নেট দুনিয়া। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
রমাকান্ত কামার!
এই নামটা বাম বা ডান, যে-দিক থেকেই পড়ুন, একই রকম হবে। কিংবা ‘নবজীবন’ বা ‘সরস’ শব্দটি।
২ ফেব্রুয়ারি, রবিবার তারিখটাও তা-ই। ০২-০২-২০২০। যে-দিক থেকেই পড়ুন, একই হবে। ইংরেজিতে একেই বলা হয় ‘প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স’। দর্পণ-শব্দ, দর্পণ-শব্দবন্ধ বা দর্পণ-সংখ্যা। রবিবারের এই বিচিত্র তারিখের দিনটাকে নিয়ে মজার চর্চা চলল দিনভর। শব্দ ও সংখ্যা দুই ক্ষেত্রেই এই মজার বিস্তৃত সাম্রাজ্য। তবে মজা ছাপিয়ে মননেও তার অধিকার। কাব্য-সাহিত্যে এই দর্পণ-শব্দের ব্যবহার দীর্ঘ কালের। রমাকান্ত কামারকে যেমন স্মরণীয় করে গিয়েছেন অমিয় চক্রবর্তী। ০২-০২-২০২০-র মতো তারিখেও এ যুগের কবি যখন মহাসময়কে উপলব্ধি করেন, মজা তখন মননে উত্তীর্ণ হয়ে যায়।
প্যালিনড্রোমিক সিকোয়েন্স বা ক্রম নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁরা জানান, রবিবারের এই ০২-০২-২০২০ তারিখ খুবই ব্যতিক্রমী। কারণ, আমেরিকান মতে যে-পদ্ধতি তারিখ লেখা হয় এবং আমেরিকা ছাড়া সারা বিশ্বে যে-পদ্ধতিতে তারিখ লেখা হয়— দুই ক্ষেত্রেই এই দিনটার সংখ্যার ক্রম, শুরু এবং শেষ দিক থেকে হুবহু এক। আমেরিকায় প্রথমে মাস, তার পরে দিনের তারিখ লেখা দস্তুর। যেটাই আগে লেখা হোক না কেন, দেখা যাচ্ছে, ফল সেই একই হবে। অর্থাৎ বিশ্বের যে-কোনও প্রান্তে যে-কোনও পদ্ধতিতেই রবিবারের তারিখ জুড়ে আছে প্যালিনড্রোমিক ক্রমের মজা। এমনটা এর আগে হয়েছিল ৯০৯ বছর আগে। সেই তারিখটা ছিল ১১-১১-১১১১।
এ দিন সকাল থেকেই হোয়াটসঅ্যাপের প্রভাতী বার্তায় এই তারিখ-মহিমা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে যায়। সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই তারিখটা সত্যিই খুব মজার। একে অঙ্কের একটা সমাপতন বলা যায়। এ-রকম দিনগুলো খুব মনে থেকে যায়।’’ কবি জয় গোস্বামী আবার বলেন, ‘‘এ-রকম তারিখ এলে বুঝতে পারি, আমরা কী বিশাল একটা মহাসময়ের মধ্যে বাস করছি! এই দিনগুলো মহাসময়ের কাছে চিহ্ন রেখে যায়।’’ জয়ের মনে আছে, হ্যালির ধূমকেতু যখন এসেছিল, বলা হয়েছিল, ৭৫ বছর পরে আবার সে পৃথিবীর কাছে ফিরে আসবে। ৭৫ বছর পরে পৃথিবীতে এখনকার ক’জনই বা থাকবেন! তাই হ্যালির ধূমকেতু দেখতে প্রচুর মানুষ সাগ্রহে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।
কবি শ্রীজাত আবার বলছেন, ‘‘দিনটার মধ্যে মজা তো আছেই। তবে এটাও দেখার, এই তারিখটার মধ্যে যেন একটা আয়না বসানো আছে। যা ‘মিরর ইমেজ’ হয়ে দু’দিকেই একই ভাবে প্রতিবিম্বিত হচ্ছে। একই ভাবে আমাদের মধ্যেও যেন একটা আয়না থাকে। যে-সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, তাতে সেই আরশিতে নিজেকে দেখাটাও খুব জরুরি।’’
একটা তারিখ কত কথাই না বলে যায়!