-ফাইল ছবি।
করোনাভাইরাসের নতুন রূপ ‘ওমিক্রন’-এর সংক্রমণ রুখতে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বৎসোয়ানা থেকে যাওয়া-আসা নিষিদ্ধ করে দিয়েছে অনেক দেশ। আরও দেশ হয়তো সেই পথেই এগবে যে হেতু প্রাথমিক ভাবে এই দু’টি দেশেই কোভিড রোগীদের মধ্যে ভাইরাসের এই নতুন রূপটির সংক্রমণ বেশি ঘটতে দেখা গিয়েছে।
কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, শুধু ওই দু’টি দেশের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিলেই ওমিক্রন সমস্যা মিটবে না। আরও অনেক কিছু করতে হবে। আর সেই সবের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে কয়েকটি নীতি ঘোষণার পথে হাঁটতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে কী কী করতে হবে সেটা অবিলম্বে চূড়ান্ত করে নেওয়া জরুরি। তা ছাড়াও আগেভাগেই ভেবে নিতে হবে কী কী করা এখন আর উচিত হবে না।
তাঁদের মতে, ওমিক্রনের সংক্রমণ রুখতে কেন্দ্রীয় সরকারকে এখন আশু দশটি কাজ করতে হবে। আর পাঁচটি কাজ না করার ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘরোয়া জমায়েতের উপরেই এখন একমাত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত কেন্দ্রীয় সরকারের। দেশের সর্বত্র প্রকাশ্য জমায়েতের উপর সেই নিষেধাজ্ঞা জারি করাটা এখন আর কাজের কাজ হবে না। তাতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হবে। সেটা আগের তিনটি তরঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উড়ানও বন্ধ করে দেওয়া উচিত হবে না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে গুটিকয়েক দেশে উড়ানের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের গতিতে লাগাম টানা যায়নি। সেটা একমাত্র কোনও দ্বীপরাষ্ট্র হলে সম্ভব হতে পারে বলেই মত তাঁদের। না হলে একেবারেই অসম্ভব গোটা পৃথিবীর ক্ষেত্রে। অবাস্তব পরিকল্পনাও বটে। পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা জারি না করে সে ক্ষেত্রে কোনও রাজ্য বা দেশ থেকে বেরনো ও কোনও রাজ্য বা দেশে ঢোকার সময় বিমানযাত্রীদের পরীক্ষা করে নেওয়ার ব্যবস্থাকে আরও জোরদার করে তোলা উচিত সরকারের।
এমন কোনও নীতি ঘোষণা করা উচিত নয় সরকারের যা চট করে শিথিল করা যাবে না। দু’টি পর্বের টিকাকরণের সুযোগ যত বেশি মানুষের কাছে যত তাড়াতাড়ি পৌঁছে দেওয়া যায় সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সংক্রমণের মাধ্যমে দেশের আমজনতার মধ্যে সার্বিক স্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতা (হার্ড ইমিউনিটি) গড়ে উঠবে এই ধারণা থেকেও সরকারকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে আসতে হবে।
এই সব তো গেল সরকারের এখন কী কী করা উচিত নয়, তার পরামর্শ।
সরকারের এই মুহূর্তে কী কী করণীয় তারও ১০টি পরামর্শ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের।
তার মধ্যে অন্যতম— নতুন সংক্রমণের ধাক্কা সইতে দেশের হাসপাতালগুলির শয্যাসংখ্যা পর্যাপ্ত কি না তা আগেভাগে বুঝে নেওয়া। সকলকে দু’টি পর্বের টিকা দেওয়া। দেশের সব রাজ্যে যাওয়া আসার জন্য টিকা পাসপোর্ট চালু করা। যাঁরা টিকা নিতে চাননি বা টিকা নেননি কোনও কারণে তাঁদের যে ভাবেই হোক বুঝিয়ে টিকা দেওয়ানো। বুস্টার টিকা দেওয়ানো যে যে ক্ষেত্রে তা জরুরি। টিকাকরণের ব্যাপারে স্বাস্থ্যকর্মীদের সচেতনতা বাড়ানো। প্রতিটি রাজ্যের সরকারি ও বেসরকারি হাসাপাতালগুলিতে সম্ভাব্য কোভিড রোগীদের জন্য ক’টি শয্যা রয়েছে তা আগেভাগেই বুঝে নেওয়া। আগের তরঙ্গগুলিতে করা ভুলগুলি থেকে শিক্ষা নেওয়া আর রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বিজ্ঞানকেই প্রাধান্য দেওয়া। এই ভাইরাসকে সঙ্গে নিয়েই যে আমাদের আরও অনেক বছর বাঁচতে হবে তার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।