Parliament Security Breach

ভগৎ সিংহ থেকে মণিপুর, কেন এবং কী ভাবে সংসদে হানা, দিল্লি পুলিশের কাছে কবুল করছে ধৃত পাঁচ জন

দিল্লি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা জানান যে, জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, ধৃতদের প্রত্যেকেই একই আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন এবং একই উপায়ে সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৪:৪৭
Share:
Objective behind Parliament Security Breach, what accused have told cops

এক অভিযুক্তকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত।

কী কারণে দু’জন সংসদের ভিতরে হানা দিলেন, কী কারণেই বা অন্য দু’জন সংসদের বাইরে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিলেন, তা নিয়ে চর্চা চলছে বৃহস্পতিবারেও। এই বিষয়ে ধৃত পাঁচ জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশও। পুলিশ সূত্রে খবর, জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পাঁচ জন জানিয়েছেন, বিবিধ বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই তাঁরা এই পথ বেছে নিয়েছিলেন।

Advertisement

পুলিশের ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, ধৃত পাঁচ জন তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, দেশে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, কৃষক বিক্ষোভ কিংবা মণিপুর হিংসার মতো নানা ঘটনায় হতাশ হচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁদের মনে হচ্ছিল যে, এই বিষয়ে সংসদে যথাযথ আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তাই খোদ লোকসভার স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যই সংসদের নিম্নকক্ষে হলুদ ধোঁয়া ওড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।

দিল্লি পুলিশের এক শীর্ষকর্তা ‘এনডিটিভি’-কে জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে যে, ধৃতদের প্রত্যেকেই একই আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন এবং একই উপায়ে সরকারকে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনও ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নির্দেশে এই কাজ করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে চাইছে পুলিশ। সমাজমাধ্যমে ধৃতদের করা কিছু পোস্ট খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সেখানেও বেশ কিছু ‘রাজনৈতিক’ বার্তা পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

Advertisement

ধৃত পাঁচ জনের মধ্যে চার জনের সঙ্গে ভগৎ সিংহের ‘যোগ’ পেয়েছে পুলিশ। দিল্লি পুলিশের সূত্রে এমনই জানা গিয়েছে। পুলিশের ওই সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, তাঁরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখার জন্য সমাজমাধ্যমে যে গ্রুপ খুলেছিলেন, সেটির নাম রাখা হয়েছিল ‘ভগৎ সিংহ ফ্যান ক্লাব’। অনেকেই মনে করছেন ১৯২৮ সালে তৎকালীন পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ সরকারের ‘বধির’ কানে স্বাধীনতার বার্তা দেওয়ার জন্য সংসদ ভবনে বোমা ছুড়েছিলেন ভগৎ সিংহ। তারই অনুকরণ করে অভিযুক্তেরা এই কাজ করল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। অভিযুক্তদের অন্যতম নীলম আজাদের পরিবারও জানিয়েছে, গ্রামের ছোটদের মধ্যে বিআর অম্বেডকর এবং ভগৎ সিংহের বই বিলি করতেন তাদের মেয়ে।

বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ বিজেপির মাইসুরু কেন্দ্রের সাংসদ প্রতাপ সিংহের দেওয়া প্রবেশপত্র পকেটে পুরে, জুতোয় রংবোমা লুকিয়ে সংসদ ভবনে ঢুকে পড়েন দুই যুবক। তার পরে অধিবেশন চলাকালীন দুপুর ১টার কিছু পরে লোকসভার দর্শক আসন থেকে নীচে ঝাঁপ মেরে ছুড়তে থাকেন সেই রংবোমা। ঘন হলুদ ধোঁয়ায় ঢেকে যায় লোকসভার মূল অধিবেশন কক্ষের একাংশ। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সাংসদেরা।

লোকসভার অন্দরে রংবোমা-কাণ্ড চলাকালীনই সংসদ ভবনের বাইরে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলেন দুই বিক্ষোভকারী। তাঁদের মধ্যে এক মহিলাও ছিলেন। দ্রুত তাঁদের আটক করে পুলিশ। যদিও লোকসভা কক্ষে ঝাঁপ মারা দু’জনকে ঠেকাতে মার্শাল বাহিনীকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। লোকসভারই দুই সাংসদ, উত্তরপ্রদেশের মালুন নাগর (বহুজন সমাজ পার্টি) এবং রাজস্থানের হনুমান বেনীওয়াল (রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি) পাকড়াও করেন তাঁদের। এর পরে ওই দুই যুবককে কয়েক জন সাংসদ মিলে শারীরিক নিগ্রহ করেন বলেও অভিযোগ।

পরে জানা যায়, সংসদের ভিতরে হামলা চালানো দু’জনের নাম সাগর শর্মা এবং মনোরঞ্জন ডি। সংসদ ভবনের বাইরের নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে ঢুকে ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান তোলা দু’জনের নাম আনমোল শিন্ডে এবং নীলম আজাদ। বুধবার রাতেই দিল্লি পুলিশের তদন্তে তথ্য মেলে যে, এই ঘটনার নেপথ্যে আরও দু’জন রয়েছেন। বস্তুত, তাঁদের পুরো পরিকল্পনাই হয়েছিল সমাজমাধ্যমে যোগাযোগের মধ্যে দিয়ে। পুলিশ দাবি করে যে, ছ’জন আলোচনা করে ঠিক করেন, সংসদের ভিতরে ঢুকে দু’জন ‘বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করবেন। বুধবার গভীর রাতে গ্রেফতার করা হয় পঞ্চম অভিযুক্ত বিশাল শর্মাকে। বিশালের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, সংসদে ‘স্মোক ক্র্যাকার’ বা রংবোমা নিয়ে ঢুকে পড়া দু’জন এবং বাইরে স্লোগান দেওয়া আরও দু’জনকে আশ্রয় দিয়েছিলেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement