লাফিয়ে কমছে যাত্রী সংখ্যা

ভাড়া বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল রেল মন্ত্রক। দু’বছরের মাথায় গিয়ে তাদের মাথায় হাত, এ যে ফল হয়েছে উল্টো! যাত্রীসংখ্যা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে প্রায় ১৪ কোটি। এই নিয়ে রেলের নানা মুনির নানা মত। অনেকে এর মধ্যে দুর্নীতির গন্ধও পাচ্ছেন।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৮
Share:

ভাড়া বাড়িয়ে আয় বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল রেল মন্ত্রক। দু’বছরের মাথায় গিয়ে তাদের মাথায় হাত, এ যে ফল হয়েছে উল্টো! যাত্রীসংখ্যা এক ধাক্কায় কমে গিয়েছে প্রায় ১৪ কোটি। এই নিয়ে রেলের নানা মুনির নানা মত। অনেকে এর মধ্যে দুর্নীতির গন্ধও পাচ্ছেন। রেলকর্তারা জানাচ্ছেন, এই ঘটনা প্রায় নজিরবিহীন। কিন্তু কেন এমন হল, তা নিয়ে স্পষ্ট কারণ দেখাতে পারছেন না তাঁরা। তবে এই নিয়ে উদ্বিগ্ন রেল মন্ত্রক। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু রেলের বিভিন্ন জোনে চিঠি পাঠিয়ে যাত্রী কমার কারণ অনুসন্ধান করে রিপোর্ট দিতে বলেছেন।

Advertisement

ইউপিএ আমলে শরিক দলের হাতে রেল মন্ত্রক থাকাকালীন বেশ কয়েক বছর যাত্রিভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বাড়াননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে জমানার শেষ দিকে দায়িত্ব পেয়েই ভাড়া বাড়িয়েছিল কংগ্রেস। মন্ত্রক সূত্রের খবর, তার পরেই যাত্রী সংখ্যা কমতে শুরু করে।

কী রকম? রেলের পরিসংখ্যান বলছে, ভাড়া বাড়ার প্রথম বছর ২০১৩-১৪ সালে গোটা দেশে রেলের যাত্রীসংখ্যা কমেছে ৭ কোটি। চলতি আর্থিক বছরে তা কমে প্রায় ১৪ কোটিতে পৌঁছেছে। বিশেষ করে শেষ ত্রৈমাসিকে যাত্রী কমেছে সব চেয়ে বেশি। রেলের বিভিন্ন জোনের মধ্যে দক্ষিণ-মধ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব রেলে যাত্রী সংখ্যা কমার পরিমাণ বেশি। কলকাতা মেট্রোরেলেও যাত্রী সংখ্যা কমেছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। রেলের আয়ও কমেছে।

Advertisement

কাল, বৃহস্পতিবার সংসদে রেল বাজেট পেশ হবে। রেল মন্ত্রক এই বাজেটে ফের এক বার ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিতে পারে। তবে দিল্লি বিধানসভা ভোটে শোচনীয় হারের পরে এখনই ভাড়া বাড়ানো হবে কি না, তাই নিয়ে শাসক বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্ব দ্বিমত। এক অংশের মতে, প্রয়োজনে রেল বাজেটের পরে কোনও এক সময় ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিক রেল। তাদের যুক্তি, রেলের মোট আয়ের ৮০ শতাংশ আসে শহরতলির লোকাল ট্রেন ও সাধারণ স্লিপার ক্লাসের ভাড়া থেকে। ফলে কেবল বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়া বাড়িয়ে আয় বাড়ানো যাবে না। দরকার লোকাল ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিতে গেলে জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। বিশেষত, আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে বিহার, অসম, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ুতে বিধানসভা ভোট। তার আগে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, তা নিয়ে ভেবে দেখা দরকার। শীর্ষ নেতৃত্বের অন্য অংশ অবশ্য এখনই ভাড়া বাড়ানোর পক্ষে।

মন্ত্রকের খবর, যাত্রীর সংখ্যা সব চেয়ে বেশি কমেছে বাতানুকূল উচ্চ শ্রেণিতে। রেলের কর্তারা জানিয়েছেন, বাতানুকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির টিকিট ভাড়া এখন প্রায় বিমান ভাড়ার সমান। মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা জানাচ্ছেন, অধিকাংশ বিমান সংস্থা মাঝে মাঝেই সস্তার টিকিট বাজারে ছাড়ছে। ওই টিকিটের ভাড়া ট্রেনের বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়ার প্রায় সমান বা তার চেয়েও কম। এতে বাতানুকূল শ্রেণির যাত্রীরা অনেক আরামে ও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য বিমানে চাপছেন। অনেকে দু’মাস আগে ট্রেনের টিকিট বুকিং করছেন। কিন্তু কোনও সস্তার বিমান টিকিট পেলে ট্রেনের টিকিট বাতিল করে দিচ্ছেন।

কেন যাত্রী কমছে, জবাব খুঁজতে অথৈ জলে রেলকর্তারা। তবে রেলের বিভিন্ন সূত্র থেকে কয়েকটি ব্যাখ্যা উঠে এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, লোকাল বা দূরপাল্লা নয়, যাত্রী কমেছে মধ্য দূরত্বের শহরতলির ট্রেনে। যেমন হাওড়া থেকে দুর্গাপুর-আসানসোল, হাওড়া থেকে খড়্গপুর-মেদিনীপুর ইত্যাদি। এই রুটে সড়কপথ এখন ভাল হয়ে যাওয়ায় অনেকে ট্রেনে চড়ছেন না। ট্রেনের ভাড়া অনেকটা বেড়ে যাওয়া যাত্রী কমার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকে। কারও মতে, ভাড়া বাড়ায় বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, যাত্রী কমলে কেন দূরপাল্লার সংরক্ষিত আসনের টিকিট সাধারণের কাছে অধরা থেকে যাচ্ছে? অনেকে এর মধ্যে দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন। রেলের কমীরাই জানাচ্ছেন, আইআরসিটিসি ওয়েবসাইট কিংবা কম্পিউটার চালিত আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, সব ট্রেনেই অপেক্ষার তালিকা দীর্ঘ। রেলের কর্তাদের একাংশ এ জন্য কম্পিউটারচালিত বুকিং ব্যবস্থার দিকে আঙুল তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, আসন সংরক্ষণে কম্পিউটার আসার পর থেকে কার্যত অডিট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে কারচুপি হচ্ছে।

প্রাক্তন রেলকর্তা সুভাষরঞ্জন ঠাকুরের কথায়, “অবিলম্বে কম্পিউটার চালিত আসন সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলিতে অডিট করা হোক। তাতে যাত্রী কমার কারণ অনেকটাই স্পষ্ট হতে পারে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement