Kerala High Court

নগ্নতা মাত্রেই যৌনতা নয়: হাই কোর্ট

৩৩ বছরের নারী আন্দোলন কর্মী রেহানা একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তাঁকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখা গিয়েছে এবং তাঁর ১৪ বছরের ছেলে এবং ৮ বছরের মেয়ে মিলে তাঁর দেহের উপরে ছবি আঁকছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

তিরুঅনন্তপুরম শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩ ০৯:৩৪
Share:

কেরল হাই কোর্ট। —ফাইল চিত্র।

নগ্নতা মানেই সব ক্ষেত্রে যৌনতার অনুষঙ্গ নয় এবং নগ্নতার প্রশ্নে নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টি বৈষম্যমূলক বলে মন্তব্য করল কেরল হাই কোর্ট। সোমবার হাই কোর্টের বিচারপতি কৌসর এডাপ্পাগাথ রেহানা ফতিমা নামে এক মহিলাকে পকসো এবং অন্যান্য ধারায় অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে এই কথা বলেন। নিজের শরীরের উপরে নিজের স্বাধীনতা থেকে অনেক সময়েই নারীকে বঞ্চিত হতে হয় বলেও আদালতের পর্যবেক্ষণ।

Advertisement

৩৩ বছরের নারী আন্দোলন কর্মী রেহানা একটি ভিডিয়ো পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তাঁকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় দেখা গিয়েছে এবং তাঁর ১৪ বছরের ছেলে এবং ৮ বছরের মেয়ে মিলে তাঁর দেহের উপরে ছবি আঁকছিল। তারা যাতে ছবি আঁকতে পারে, তার জন্যই তিনি অর্ধনগ্ন অবস্থায় ‘পোজ়’ দিয়েছিলেন। সেই কারণে রেহানার বিরুদ্ধে পকসো, নাবালক বিচার আইন এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক বিজেপি নেতা। রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনও পুলিশকে পকসো আইনে মামলা করতে বলেছিল। কিন্তু রেহানাকে যাবতীয় অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়ে বিচারপতি আজ বলেছেন, রেহানার সন্তানদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে কোনও যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত করানো হয়েছিল বলে মনে করার কারণ নেই। রেহানা শুধুমাত্র তাঁর শরীরকে তাঁর শিশুসন্তানদের ক্যানভাসে পরিণত হতে দিয়েছিলেন।

রেহানার এই মামলার সূত্রেই একাধিক পর্যবেক্ষণ জানিয়েছে আদালত। বিচারপতি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছেন, ‘‘নারীর নিজের শরীরের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার সাম্য এবং ব্যক্তিগত পরিসরের মৌলিক অধিকারের অংশ। সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদে ব্যক্তিস্বাধীনতার যে অধিকার দেওয়া আছে, এটা তারও অংশ।’’

Advertisement

বস্তুত রেহানা নিজেও তাঁর আপিলে এই যুক্তিই দিয়েছিলেন। নিম্ন আদালতে মুক্তি না পাওয়ায় উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে তিনি বলেছিলেন, ভিডিয়োটি তিনি করেছিলেন একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার জন্যই। বার্তাটি এই যে, পুরুষের অনাবৃত ঊর্ধ্বাঙ্গকে সমাজ ‘স্বাভাবিক’ বলে মনে করে। নারীর ক্ষেত্রে তা সব সময়েই যৌনতার অনুষঙ্গে দেখা হয়। বিচারপতি এডাপ্পাগাথ তাঁর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেছেন, ‘‘মায়ের শরীরে সন্তানের ছবি আঁকাকে কোনও ভাবেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যৌনক্রিয়া হিসাবে দেখা চলে না। কোনও যৌন অভিসন্ধি থেকে কাজটা করাও হয়নি। ওই ভিডিয়োতে কোথাও যৌনতার চিহ্ন নেই। শিশুদের পর্নোগ্রাফির কাজে লাগানো হচ্ছে, এমন সাক্ষ্য নেই। নারী হোক বা পুরুষ, ঊর্ধ্বাঙ্গে ছবি আঁকাকে যৌনধর্মী বলা যায় না।’’

রেহানার বিরুদ্ধ পক্ষের আইনজীবী সওয়াল করেছিলেন, ভিডিয়োতে ফতিমার ঊর্ধ্বাঙ্গ দেখা যাচ্ছে। সেটা অশালীন। সেই যুক্তিও খারিজ করে আদালত বলেছে, নগ্নতা মানেই স্বতঃসিদ্ধ ভাবে অশালীন নয়। প্রাচীন মন্দিরগাত্রের ভাস্কর্যকে কেউ অশালীন বলে মনে তো করেই না, বরং পবিত্র বলে ভাবে। পুরুষের অনাবৃত বক্ষ নিয়ে কেউ আপত্তি তোলে না। কেরলে কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বরং পুরুষদেহে ছবি আঁকারও চল আছে। ‘‘সেই অধিকার থেকে নারীর কিন্তু বঞ্চিত। সমাজের দুমুখোপনাই তার জন্য দায়ী। সে তার শরীর নিয়ে কী করবে, তার জীবন নিয়ে কী করবে, এই নিয়ে প্রতি পদে নারীকেই বৈষম্যের মুখে, হেনস্থার মুখে পড়তে হয়।’’ আদালত এও মনে করিয়ে দিয়েছে, সমাজের চোখে অনৈতিক মানেই যে সব সময় আইনের চোখে অপরাধ, তা নয়। পরকীয়া সম্পর্ক, সমকামী সম্পর্ক, লিভ-ইন সম্পর্ক— সমাজের অনেকের বিচারে অনৈতিক, কিন্তু আইনের বিচারে তা নয়। ‘‘সৌন্দর্যের অবস্থান যেমন দ্রষ্টার চোখে, অশালীনতাও তাই।’’ বিচারপতি বলেছেন, যদি রেহানার সন্তানের স্বার্থই চিন্তা করতে হয়, তা হলে সেই মাপকাঠিতেও রেহানার মুক্তি পাওয়াই উচিত। এর আগে রেহানা শবরীমালা মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement