এনআরসি গোটা দেশেই বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ওড়ালেন মমতার যুক্তি

বিরোধীরা, বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব। আজও কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন তিনি। কিন্তু অমিত অনড়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৫
Share:

অমিত শাহ।—ছবি পিটিআই।

অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)-তে প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়েছে। অভিযোগ, অধিকাংশই হিন্দু। অস্বস্তির চাপে সে রাজ্যে বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা বলছেন, অসমের এনআরসি বাতিল হবে। এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ সওয়াল করে যাচ্ছেন গোটা দেশে এনআরসি তৈরির বিষয়ে। আজ ফের জানিয়েছেন, দেশের বৈধ নাগরিকদের সরকারি তালিকা থাকা প্রয়োজন। মোদী সরকার এ বিষয়ে বদ্ধপরিকর।

Advertisement

বিরোধীরা, বিশেষ করে তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই এর বিরুদ্ধে সরব। আজও কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার প্রতিবাদে মুখ খুলেছেন তিনি। কিন্তু অমিত অনড়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, ‘‘সময় এসেছে এই ধাঁচের একটি তালিকা তৈরির। এই তালিকায় যাঁরা থাকবেন, শুধু তাঁরাই ভোট দিতে পারবেন। দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অধিকার থাকবে শুধু তাঁদেরই। ইতিমধ্যেই এই কাজে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আর বিলম্ব করা হবে না।’’ সঙ্গে অমিতের ঘোষণা, ‘‘পৃথিবীর কোনও দেশই অনুপ্রবেশকারীদের বসবাস করতে দেয় না। ভারতও দেবে না।’’

অমিতের যুক্তি খারিজ করে মমতা এ দিন বলেন, ‘‘আজ এ প্রশ্ন উঠছে কেন? এত দিন যাঁরা ভোট দিলেন, তাঁরা কি এ দেশের নাগরিক নন? আজ কাগজ দেখিয়ে তাঁদের নাগরিকত্বের প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে!’’ মমতার এই আপত্তি প্রসঙ্গে অমিতের মন্তব্য, ‘‘একটি দলের সভানেত্রী বা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি কী অবস্থান নেবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার। এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বলতে পারি, গোটা দেশে এনআরসি হবে। এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বা সে রাজ্যের ভোটের সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

আগামী বিধানসভা ভোটে বাংলা দখল বিজেপির ঘোষিত লক্ষ্য। অসমে এনআরসি তালিকা তৈরির কাজ শুরু হতেই তারা জানিয়েছিল, এ বার বাংলার পালা। অসমের ধাঁচেই এনআরসি হবে পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু অসমের এনআরসিতে হাত পুড়েছে তাদের। অমিত গোটা দেশে এনআরসির কথা বলতেই, অসমের নেতামন্ত্রীরা সেটাকে আঁকড়ে ধরে রাজ্যের এনআরসি বাতিলের কথা বলতে শুরু করেছেন। যদিও শীর্ষ আদালতের নির্দেশে ও তাদের তত্ত্বাবধানে তৈরি হওয়া পঞ্জি কী ভাবে বাতিল হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারছেন না তাঁরা। হিন্দু ভোটারদের আশ্বস্ত করতে বিজেপি এখন তাই সামনে রাখছে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিলকে। সংসদের চলতি অধিবেশনের শেষ দিকে যা পেশ করতে চায় সরকার। তার আগে উত্তর-পূর্বের সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে আলোচনাও সারছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে গত কাল দিল্লিতে বৈঠক করেছেন এ রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ। মুকুল রায়ও ছিলেন সেখানে। দলীয় সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় নেতারা সেখানে বলেছেন, সাংগঠনিক নির্বাচনের জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পর্যাপ্ত প্রচার করা হয়নি। কিন্তু আর দেরি না করে ওই প্রচারে নেমে পড়তে হবে।

প্রতিবেশী দেশগুলির অ-মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে ওই বিলে। বিরোধীদের প্রশ্ন, ধর্মনিরপেক্ষ দেশের সরকার কি আদৌ ধর্মভিত্তিক কোনও নীতি গ্রহণ করতে পারে? এর জবাবে অমিত আজ অনুপ্রবেশকারী ও শরণার্থীদের মধ্যে পার্থক্যের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ‘‘আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হচ্ছে মুসলিম দেশ। সে দেশে অন্য ধর্মের মানুষেরা ধর্মীয় অত্যাচারের শিকার হয়ে এ দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ধর্মীয় অত্যাচারে ওই দেশগুলির হিন্দু, শিখ, পার্সি ও বৌদ্ধ ধর্মের লোকেরা ভারতে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের কোনও ভাবেই অনুপ্রবেশকারী বলা যায় না। কারণ অতীতেও উগান্ডা, শ্রীলঙ্কা থেকে আসা শরণার্থীদের ভারত আশ্রয় দিয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement