ছবি: পিটিআই।
তিন ঢিলে গরিব-বিরোধী তকমা ঝেড়ে ফেলার চেষ্টায় নামল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। শহরের বস্তিবাসীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা, ধান ও গমের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানো এবং খরাগ্রস্ত এলাকায় ১০০ দিনের বদলে পরিবারপিছু অন্তত ১৫০ দিনের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। প্রশ্ন উঠেছে, সরকার শুধু শহরাঞ্চলের গরিবদের আবাসনের দিকেই কেন নজর দিচ্ছে? গ্রামের মানুষরা কেন এর আওতার বাইরে? কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এর জবাবে বলেন, ‘‘গ্রামের ক্ষেত্রেও খুব শীঘ্রই সার্বিক পরিকল্পনা তৈরি হবে।’’ তিনি জানান, ‘২০২২-এর মধ্যে সকলের জন্য আবাসন’ প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
কংগ্রেস ক্রমাগত প্রচার চালাচ্ছে, মোদী সরকার গরিবের বন্ধু নয়। বরং গুটিকয় শিল্পগোষ্ঠীর স্বার্থপূরণই তাদের লক্ষ্য। জমি অধিগ্রহণ নীতির ক্ষেত্রে সরকারের অনমনীয় অব,স্থা বিল নিয়ে সরকারের অনড় অবস্থানকেও হাতিয়ার করে সরকারের গায়ে কৃষক-বিরোধী তকমা সেঁটে দেওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সনিয়া ও রাহুল গাঁধীরা। এই অবস্থায় এ দিনের তিনটি সিদ্ধান্ত গ্রাম-শহরের গরিবদের মন জয়ে বিশেষ ভূমিকা নেবে ও কংগ্রেসের আক্রমণ অনেকটাই ভোঁতা করে দেবে বলে মনে করছে সরকার।
সরকারের আশা, এতে যে নিছক রাজনৈতিক লাভ মিলবে তা নয়, অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। আবাসন ক্ষেত্রে নয়া উদ্যমে কর্মকাণ্ড শুরু হবে। বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়বে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) বাড়ার ফলে কৃষিতে উৎপাদন বাড়বে। কৃষকদের হাতে বেশি টাকা এলে গ্রামে কেনাকাটা বাড়বে। ফলে বাড়বে কারখানার উৎপাদনও। যদিও ফসলের সহায়ক মূল্য বাড়ার ফলে মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে বলেও অনেকে মনে করছেন।
কেন্দ্র এ দিন ‘সকলের জন্য আবাসন’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করলেও আদতে এর লক্ষ্য শহরের বস্তি বা ঝুপড়িবাসীদের নিজস্ব বাড়ি তৈরিতে সাহায্য করা। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী সব থেকে পিছিয়ে পড়াদের উন্নতি এবং সকলের সঙ্গে সকলের উন্নতির (অন্ত্যোদয় ও সবকা সাথ সব কা বিকাশ) প্রতি দায়বদ্ধ। সকলের জন্য আবাসন প্রকল্প তারই প্রমাণ। এই প্রকল্পে ৭ বছরে ২ কোটি নতুন বাড়ি তৈরি হবে বলে সরকারি হিসেব। গরিব ও বস্তিবাসীদের ক্ষেত্রে গৃহঋণে সুদের হারে ৬.৫% ভর্তুকিও দেবে সরকার। যার অর্থ, মাত্র ৪% হারে সুদে ঋণ মিলবে। সকলের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা হবে চার ভাবে। l বস্তির জমিতে বেসরকারি নির্মাতারা আবাসন গড়বে বস্তিবাসীরা সেখানে পুনর্বাসন পাবে l গৃহঋণে মিলবে ভর্তুকি। l সস্তার আবাসন প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগেও। l বাড়ি তৈরি বা সংস্কার খাতে গরিবদের ভর্তুকি।
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ঋণে ভর্তুকির সিদ্ধান্তে শহরের গরিবরা বাড়ি পিছু ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত সাহায্য পাবেন। এখন গরিবরা ১৫ বছরের মেয়াদে ৬ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ির ঋণ পান। সুদে ৬.৫% ভর্তুকি দেওয়ার ফলে ইএমআই ৬,৬৩২ টাকা থেকে ৪,০৫০ টাকায় নেমে আসবে। বাড়ি তৈরির জন্য সরাসরি দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত ভর্তুকি মিলবে।
এ দিন গ্রামের মানুষের জন্য দু’টি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী চৌধুরি বীরেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন, ‘মহাত্মা গাঁধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট’ পাশ করিয়ে ২০০৯-এর ভোটের আগে ফায়দা তুলেছিল বিগত ইউপিএ সরকার। কিন্তু তাতে বছরে পরিবার পিছু মাত্র ১০০ দিনের কাজ দেওয়া হয়। মোদী সরকার খরাগ্রস্ত এলাকায় বাড়িয়ে ১৫০ দিনের কাজ জোগাবে।
ধানের সহায়ক মূল্য বাড়ানো হয়েছে কুইন্টাল প্রতি ৫০ টাকা। ডালের ক্ষেত্রে ২৭৫ টাকা বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০০ টাকা বাড়তি বোনাসের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেশে চাহিদা অনুযায়ী ডাল উৎপাদন হয় না বলে আমদানি করতে হয়। ডালের সহায়ক মূল্য বাড়ানোয় অনেক চাষি ধানের বদলে ডাল চাষে ঝুঁকবেন বলে সরকারের আশা। কিন্তু খরিফ মরশুম শুরু হয়ে যাওয়ার পরে কেন সহায়ক মূল্য ঘোষণা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও উঠেছে। জবাবে কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহ বলেন, ‘‘সহায়ক মূল্য বেড়েছে দেখলে কৃষকরা আরও বেশি উৎপাদন করবেন।’’
সুদে ভর্তুকি, ফসলের বাড়তি দাম ও বাড়তি ৫০ দিনের কাজ জোগাতে সরকারি কোষাগারে বাড়তি কত বোঝা চাপছে, তা অবশ্য খোলসা করতে চাননি কোনও মন্ত্রী।
পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে কৃষকদের থেকে ফসল কেনার ক্ষেত্রে খামতি নিয়ে এ দিন আলোচনা হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। পশ্চিমবঙ্গে চাষিদের থেকে ধান বা আলু ঠিক মতো কেনা হচ্ছে না বলে বিরোধীরা লাগাতার অভিযোগ তুলছেন। বিহার ও ওড়িশাতেও একই পরিস্থিতি বলে রিপোক্ট পেয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্র তাই ফসল কেনার ব্যবস্থা আরও মজবুত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছে।
সহায়ক মূল্য বাড়ানোয় মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের যুক্তি, বর্তমানে মূল্যবৃদ্ধির যা হার, তার থেকে কম হারেই সহায়ক মূল্য বেড়েছে। চাষিদের মন জয় করার জন্য প্রচুর পরিমাণে ফসলের দাম না বাড়িয়ে সরকার সংযমের পরিচয় দিয়েছে বলেও সরকারের দাবি।