ভেস্তে গিয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। নোট বাতিল নিয়ে রাহুল গাঁধী এখনও যতটা আক্রমণাত্মক, তাতে আসন্ন বাজেট অধিবেশনও পণ্ড হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। সেই সম্ভাবনা রুখতে তাই আজ, নোট বাতিলের দু’মাস পূর্তির দিনে দ্বিমুখী আক্রমণে নামল বিজেপি। যার নেতৃত্ব দিলেন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান দুই চরিত্র। এক জন অভিযোগ করলেন, কালো টাকার বিরুদ্ধে সরব হয়ে আখেরে দুর্নীতিগ্রস্তদেরই পাশে দাঁড়াচ্ছে বিরোধীরা। অন্যের দাবি, নোট-সঙ্কট অনেকটাই ঘুচে গিয়েছে।
এই দু’জন, যথাক্রমে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদী আজ যখন বিরোধীদের বিঁধতে বেছে নিয়েছেন প্রবাসী ভারতীয় দিবসের অনুষ্ঠানমঞ্চ, তখন অরুণ জেটলির ‘পোস্ট’ আছড়ে পড়েছে ফেসবুকের দেওয়ালে। দুই নেতারই বক্তব্যের নির্যাস— সরকার যখন জাল ও কালো টাকা রুখতে পদক্ষেপ করছে, তখন কিছু বিরোধী দল বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সংসদ চলতে না দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্তদেরই পাশে দাঁড়াচ্ছে তারা। মোদীর কথায়, ‘‘কিছু ‘রাজনৈতিক পূজারী’, যাঁরা কালো টাকার পুজো করেন, তাঁরা সরকারের পদক্ষেপকে ‘জনবিরোধী’ আখ্যা দিচ্ছেন। অথচ, দীর্ঘদিন রাজনৈতিক ব্যবস্থা, প্রশাসন ও সমাজকে ফোঁপরা করে চলেছে এই কালো টাকা।’’
কারও নাম নেননি মোদী। তুলনায় জেটলি অনেক বেশি চাঁছাছোলা। তাঁর আক্রমণের মূল নিশানা রাহুল। অর্থমন্ত্রী লেখেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যেখানে পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভেবে ডিজিটাল লেনদেনের পথে হেঁটেছেন তখন রাহুলের লক্ষ্য হল, সংসদের আগামী অধিবেশনটাই ভন্ডুল করে দেওয়া।’’
কংগ্রেস সহ-সভাপতিকে এই আক্রমণের নেপথ্যে বিজেপির নির্দিষ্ট রণকৌশল দেখছে রাজনৈতিক শিবির। বিজেপিই এখন স্বীকার করে যে, ‘নেতা’ রাহুলের ক্রমউত্থান ঘটছে। এত দিন রাহুলের পাল্টা হিসেবে দলের দ্বিতীয় সারির নেতাদের নামালেই চলত। এখন তাঁকে সামলাতেই মুখ খুলতে হচ্ছে মোদী-জেটলির মতো নেতাদের। একান্তে কংগ্রেস নেতাদের একাংশও বলছেন, আগে কোনও বিষয়ে আন্দোলন শুরু করলে তা নিয়ে লেগে থাকার মানসিকতা ছিল না রাহুলের। মাঝপথে খেই হারাতেন। এখনকার রাহুল অনেক বেশি ধারালো, ধারাবাহিক, লক্ষ্যে স্থির।
এই পরিবর্তন দেখেই কৌশল পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে বিজেপি। নোট বাতিল প্রশ্নে বিরোধী দলগুলির জোট এখন তাদের প্রধান দুশ্চিন্তা। বিশেষত, কংগ্রেসকে ওই জোট থেকে আলাদা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যদিও একাধিক চেষ্টা সত্ত্বেও জোটে বিশেষ ফাটল ধরাতে পারেনি বিজেপি। জেটলিদের আশা ছিল, অন্তত দুর্নীতি প্রশ্নে তৃণমূল সাংসদদের জেলে পোরা হলে কংগ্রেস বা অন্য দলগুলি তাদের পাশ থেকে সরে যাবে। কিন্তু সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতারির পরে বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসারই অভিযোগ তুলেছে বিরোধীদের একটা বড় অংশ।
তবু সোশ্যাল মিডিয়ায় চেষ্টাটা জারি রেখেছেন জেটলি। আজ তিনি লিখেছেন, ‘‘অত্যন্ত দুঃখজনক যে, কংগ্রেসের মতো জাতীয় দল এমন অবস্থান নিয়েছে যা প্রযুক্তি, পরিবর্তন ও সংস্কারের বিরোধী। কালো টাকার কারবারিদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তাঁরা।’’ নোট বাতিলের পরে মানুষের ক্ষোভ ও বিরোধী আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাজারে নগদের অপ্রতুলতা। জেটলি তা মেনেই বলেন, ‘‘নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সমস্যা তৈরি করেছিল। কিন্তু সেই সমস্যাসঙ্কুল সময় পেরিয়ে গিয়েছে। আর্থিক কাজ ফের পুরনো জায়গায় ফিরে গিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলিও জানিয়েছে, উন্নয়ন খাতে খরচের মতো অর্থ জমা রয়েছে তাদের কাছে।’’
মমতাকে খোঁচা রাজনাথের
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আবার আক্রমণ রাজনাথ সিংহের। ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘‘দেশের মানুষের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীজি যুগান্তকারী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর বিরোধিতা না করে মমতা বরং নিজের রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার দিকে নজর রাখুন।’’ রবিবার রাঁচীতে সিআইএসএফের পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয়ের উদ্বোধনে হাজির রাজনাথকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল— অরুণ জেটলি বা রাজনাথের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের ‘পরামর্শ’ দিয়েছেন মমতা। জবাবে পাল্টা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকেই তোপ দাগেন রাজনাথ। সারদা, রোজ ভ্যালি তদন্তে তৃণমূলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ভাবে সিবিআইকে ব্যবহারের অভিযোগও তুলছেন মমতা। তা নিয়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘সিবিআই নিজের কাজ করছে। মমতা কি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাজকর্মও বন্ধ করে দিতে চান?’’