কোনও গলিতে জল না এলে, ছোটখাটো প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে ভোট বয়কটের আওয়াজ অনেক সময়ই শোনা যায়। কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালের পাড়া-মহল্লায় যে ভাবে পোস্টার পড়েছে, তাতে ঘুম ছুটেছে নরেন্দ্র মোদীদের। কারণ ভোট বয়কটের কথা তাঁরা বলেননি। সরাসরি নোটা-য় ভোট দেওয়ার ডাক দিয়েছেন বাসিন্দারা।
ভোপালের এই উচ্চবর্ণ বাসিন্দাদের ক্ষোভ অবশ্য তফসিলি জাতি-উপজাতিদের সংরক্ষণের কারণে। কিন্তু বিজেপির বিরুদ্ধে নানা কারণে অসন্তোষ ছড়িয়েছে অন্য রাজ্যেও। বিজেপির চিরাচরিত ভোটাররা এ বারে তাঁদের ভোট না দিয়ে নোটা-য় দিতে পারেন বলে দলের আশঙ্কা। পরিস্থিতি সামাল দিতে মোদী, অমিত শাহরা দু’দফায় বৈঠক করে ফেলেছেন। কিন্তু যুতসই সমাধানসূত্র না পেয়ে এ বারে আরএসএসের দ্বারস্থ হয়েছে দল। খোদ সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত এখন নোটা-য় ভোট না-দেওয়ার আবেদন করছেন। রাজ্যে রাজ্যে শিবির খাটিয়েও নোটা-র বিরুদ্ধে প্রচার অভিযান করতে হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বছর চারেক আগে ভোটযন্ত্রে ‘নোটা’ পদ্ধতি চালু করেছিল নির্বাচন কমিশন। যার পুরো নাম ‘নান অব দ্য অ্যাবভ’। অর্থাৎ, কেন্দ্রের কোনও প্রার্থীকেই পছন্দ না-হলে ভোটার নোটা-র বোতাম টিপে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। গত লোকসভায় ১ শতাংশের একটু বেশি ভোট পড়েছিল নোটা-য়। এ বারে সেটি অনেকটাই বাড়ার আশঙ্কা করছে বিজেপি। দলের অনেকের মতে, নোটায় বেশি ভোট পড়লে ভোট-অঙ্কটিই গুলিয়ে যেতে পারে। আবার কংগ্রেসও সেই ভোট টানার চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে সামনের বিধানসভা ভোটে রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কাও করছেন অনেকে।
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আসলে সকলের সব প্রতিশ্রুতি এক সঙ্গে সামাল দেওয়া মুশকিল। কিন্তু এখন যে ভাবে নোটায় মন তৈরি হচ্ছে, সেটিও মোকাবিলা করতে হবে দলকে। সঙ্ঘও এ ব্যাপারে সাহায্য করছে।’’ বিজয়া দশমীতে সরসঙ্ঘচালকের বক্তৃতার উপরে সব সময়েই নজর থাকে শাসক ও বিরোধী শিবিরের। লোকসভা ভোটের আগে শেষ বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানেও এ বারে খোদ মোহন ভাগবত প্রকাশ্যে নোটায় ভোট না-দেওয়ার আবেদন করেছেন।
মোদীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের কথা প্রকারান্তরে কবুল করে ভাগবত বলেন, ‘‘একশো শতাংশ ভাল কেউ নন। তবু এক জনকে আপনি একেবারেই পছন্দ করেন না, আর এক জনও অকর্মণ্য। এই পরিস্থিতিতে দু’জনের মধ্যে বাছতে হলে ‘মন্দের ভাল’-কেই ভোট দিতে হবে।
কিন্তু নোটা-য় ভোট দিলে ফায়দা হবে তাঁরই, যাঁকে আপনার একেবারেই পছন্দ নয়।’’ বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠানেই ভাগবত এ কথা প্রথম বার বললেন, তা নয়। দিল্লিতে বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত আরএসএসের তিন দিনের অনুষ্ঠানেও একই আবেদন করেছিলেন তিনি। এ থেকেই স্পষ্ট, নোটা নিয়ে কতটা চিন্তিত সঙ্ঘ ও বিজেপি।