—ফাইল চিত্র।
পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির নিরাপত্তা শুধু সন্ত্রাসবাদী দৌরাত্ম্যের কারণে অনিশ্চিত নয়। সে দেশের পরমাণু নিরাপত্তার পক্ষে সবচেয়ে বড় বিপদ সে দেশের সেনাই। এমনই মনে করছেন ভারতের প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন। ভারতের বিদেশনীতি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মেননের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। সেই বইতেই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। বিশেষ প্রশিক্ষণ না থাকলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাই জঙ্গিরা কখনও পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্রাগার কব্জা করতে পারলেও, পরমাণু বোমা ব্যবহার করে নাশকতা চালানো তাদের পক্ষে কঠিন বলে মেনন মনে করছেন। বরং জিহাদের জিগিরে উন্মাদ কোনও পাইলট বা কোনও ব্রিগেডিয়ার, পরমাণু অস্ত্রের অপপ্রয়োগ করতে পারেন বলে শিবশঙ্কর মেনন তাঁর বইতে লিখেছেন। তাঁর মতে, পাক সামরিক বাহিনীর কট্টরবাদী এবং অন্ধ ভারত-বিদ্বেষী কর্মীরাই সে দেশের পরমাণু নিরাপত্তার পক্ষে সবচেয়ে বিপজ্জনক।
পৃথিবীর এক মাত্র দেশ পাকিস্তান, যাঁদের পরমাণু কর্মসূচি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, সম্পূর্ণ ভাবে সেনার নিয়ন্ত্রণাধীন। পাক সেনা গত কয়েক বছরে ‘ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন’ অর্থাৎ ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপর খুব বেশি জোর দিয়েছে। এই ট্যাকটিক্যাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন ছোট ছোট এলাকায় ধ্বংসলীলা চালানোর জন্য তৈরি করা হয়। যেমন, প্রতিপক্ষের একটি সামরিক ক্যাম্প খুব সহজে এবং কম সময়ে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিতে এই ধরনের ছোট পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। কোনও একটি নির্দিষ্ট যুদ্ধক্ষেত্রে বা নির্দিষ্ট ফ্রন্টে হাজির প্রতিপক্ষ বাহিনীকে লহমায় খতম করতেও এই ট্যাকটিক্যাল নিউক ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্রের অভিঘাত এত কম এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকে যে এই ট্যাকটিক্যাল নিউকের হামলাকে অনেকেই পুরোদস্তুর পরমাণু হামলা মনে করেন না। পাকিস্তান সেই সুযোগই নিতে চায়। ট্যাকটিক্যাল নিউক দিয়ে তারা ভারতকে বিধ্বস্ত করতে চায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেই যেহেতু সেই ধরনের হামলাকে পুরোদস্তুর পরমাণু হামলা হিসেবে ধরবে না, সেহেতু ভারতকে পাকিস্তানের উপর পাল্টা পরমাণু হামলার ছাড়পত্রও আন্তর্জাতিক মহলের বড় অংশই দিতে চাইবে না। এ কথা মাথায় রেখেই অস্ত্রাগারে ট্যাকটিক্যাল নিউকের সংখ্যা বাড়িয়ে চলেছে পাকিস্তান।
ট্যাকটিক্যাল নিউক যেহেতু ছোট আকারের পরমাণু অস্ত্র এবং যেহেতু তা ছোটখাটো লক্ষ্য পূরণের জন্যই তৈরি, তাই বাহিনীর অপেক্ষাকৃত নীচের স্তরের হাতে তা পৌঁছে দিতে হবে এবং সেই স্তরের কর্মীদেরই এই ট্যাকটিক্যাল নিউক প্রয়োগের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এঁদেরই মধ্যে কোনও অপরিণামদর্শী ব্যক্তি যদি উচ্চতর কর্তৃপক্ষের নির্দেশের তোয়াক্কা না করে ট্যাকটিক্যাল নিউক প্রয়োগ করে দেন, তা হলে ফল মারাত্মক হবে।
আরও পড়ুন: ড্রাগন ও হাতি এক সঙ্গে চলতে পারে, বিশ্ব শাসন করতে পারে: বলল চিন
শিবশঙ্কর মেনন লিখেছেন, ভারতের পরমাণু নীতি যতটা শান্তিপূর্ণ, অন্য কোনও পরমাণু শক্তিধর দেশের নীতি তেমন নয়। ভারত ঘোষিত ভাবে, ‘নো ফার্স্ট ইউজ’ নীতি গ্রহণ করেছে। অর্থাৎ ভারতের উপর কেউ পরমাণু হামলা না চালালে, ভারত তার উপর পরমাণু হামলা চালাবে না। কিন্তু, ছোট বা বড় যে কোনও পরমাণু হামলার শিকার যদি ভারত হয়, তা হলে বেপরোয়া জবাব দেওয়া হবে। আক্রমণকারীর বিরুদ্ধে তখন আর কোনও ছোট পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা হবে না, দৈত্যাকার স্ট্র্যাটেজিক নিউক্লিয়ার ওয়েপনই প্রয়োগ করা হবে। কারণ, ছোট হোক বা বড়, যে কোনও ধরনের পরমাণু অস্ত্রের প্রয়োগকেই যে ভারত পরমাণু হামলা হিসেবে ধরবে, তাও ভারতের ঘোষিত নীতির মধ্যেই পড়ে। জানিয়েছেন শিবশঙ্কর মেনন।