সৌজন্য: মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসনের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
পাকিস্তানে সন্ত্রাসের স্বর্গোদ্যান বরদাস্ত করা হবে না— ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইসলামাবাদকে এই বার্তা দিলেন মার্কিন বিদেশসচিব রেক্স টিলারসন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারত-আমেরিকা কাঁধে কাঁধ দিয়ে লড়বে, এ কথাও আজ বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তবে ভারতের তরফে আজ যে ভাষায় পাকিস্তানকে আক্রমণ করা হয়েছে, ততটা সুর চড়াননি মার্কিন কর্তা। বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, সেটা সম্ভবও নয়। কারণ, কাবুল প্রশ্নে পাকিস্তানকে একেবারে বাদ দিয়ে এগোবে ওয়াশিংটন— এতটা আশা করা যায় না। তবে সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারতের মাটিতে দাঁড়িয়ে ইসলামাবাদকে যে কড়া বার্তা দিলেন টিলারসন, সেটাকেই কাজে লাগাতে তৎপর হবে নয়াদিল্লি।
পাক তালিবান বা হক্কানি নেটওয়ার্ক নিয়ে কাবুলের সমস্যা মেটাতে ওয়াশিংটন নিজেদের শর্ত অনুযায়ী ইসলামাবাদকে চালনা করতে পারবে কি না— তা নিয়ে বিতর্কের অবকাশ রয়েছে। কিন্তু বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও মার্কিন বিদেশসচিব টিলারসন আজ যে ভাবে পাশাপাশি বসে প্রকাশ্যে পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী ভূমিকাকে আক্রমণ করেছেন, তাকে অভূতপূর্ব বলেই মনে করছেন কূটনীতিকেরা। সাউথ ব্লকের দাবি, দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও রণনীতিতে একটি মাইলফলক তৈরি হলো, যা ছিল দীর্ঘদিনের কাঙ্ক্ষিত।
কালই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সঙ্গে বৈঠকে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাকিস্তানকে কোণঠাসা করা নিয়ে কথা বলেছেন। আর আজ বিকেলে টিলারসনের সঙ্গে আলোচনাতেও অগ্রাধিকার পায় রাষ্ট্রীয় মদতে পাকিস্তানে বেড়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠনগুলি ও আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস দমনের প্রসঙ্গ। ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলার পাশাপাশি, আঞ্চলিক শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যেও একজোটে কাজ করার উপরে জোর দেন দু’জনেই।
আরও পড়ুন: অবশেষে ভোট ঘোষণা মোদীর রাজ্যে
এর আগে টিলারসনের সঙ্গে বৈঠক হয় সুষমার। দীর্ঘ আলোচনার পরে তাঁকে পাশে বসিয়েই বিদেশমন্ত্রী তুলোধোনা করেন ইসলামাবাদকে। তাঁর কথায়, ‘‘যে সব দেশ জঙ্গিদের সমর্থন করে, তাদের জবাব দিতে হবে। টিলারসনের সঙ্গে আমরা একমত হয়েছি যে, নিজেদের মাটিতে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির নিরাপদ স্বর্গোদ্যান গড়ে তুলেছে পাকিস্তান। অবিলম্বে তা ধ্বংস করতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন রণনীতি তখনই সফল হবে, যখন পাকিস্তান তাদের জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’’
টিলারসনও বলেন, ‘‘অনেকগুলি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন পাকিস্তানে নিরাপদ স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে, যা সে দেশের সরকারের সুস্থিতির পক্ষেও বিপজ্জনক। আমি ভারতে আসার আগে ইসলামাবাদ হয়ে এসেছি। সে দেশের নেতৃত্বের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমি তাঁদের স্পষ্ট জানিয়েছি সন্ত্রাসবাদের স্বর্গোদ্যান কখনওই বরদাস্ত করা হবে না। আমাদের আশা, এই সব সংগঠন ধ্বংস করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ তবে ভারতের হতাশা বাড়িয়ে আজ পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী খাজা আসিফ জানিয়েছেন, ৭৫ জন সন্ত্রাসবাদীর যে তালিকা আমেরিকা তাদের দিয়েছে, তার মধ্যে ২৬/১১-র মূল চক্রী হাফিজ সইদের নাম নেই।
দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাস দমনে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে একটি ভারত-আমেরিকা-আফগান অক্ষের ঘোষণা করেছেন সুষমা। ডিসেম্বরে এই অক্ষের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে নয়াদিল্লিতে।