Supreme Court

Supreme Court: ক্ষুধার রাষ্ট্রে আদালতের রোষে মোদী সরকার

অনাহারে কারও যাতে মৃত্যু না হয়, তা নিশ্চিত করাটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share:

অনাহারে মৃত্যু এড়াতে সারা দেশে কমিউনিটি কিচেন খোলার লক্ষ্যে সরকারি নীতি গঠনের আর্জি সুপ্রিম কোর্টে

অপুষ্টির আন্তর্জাতিক সূচক নিয়ে ভাবিত নয় আদালত। বরং তার লক্ষ্য, ক্ষুধার নিবৃত্তি। অনাহারে কারও যাতে মৃত্যু না হয়, তা নিশ্চিত করাটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব। আজ এই মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমণা, বিচারপতি এ এস বোপান্না এবং বিচারপতি হিমা কোহালির বেঞ্চ।

Advertisement

অনাহারে মৃত্যু এড়াতে সারা দেশে কমিউনিটি কিচেন খোলার লক্ষ্যে সরকারি নীতি গঠনের আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন সমাজকর্মী অনুন ধওয়ন, ঈশান ধওয়ন এবং কুঞ্জনা সিংহ। সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভর্তুকিযুক্ত ক্যান্টিন চালু করার কথা বলা হয়েছিল ওই আবেদনে। আজ তারই শুনানিতে আদালত বলেছে, সমস্ত রাজ্যের মতামত নিয়ে কমিউনিটি কিচেন সংক্রান্ত সর্বভারতীয় নীতি তৈরি করতে কেন্দ্রকে তিন সপ্তাহ সময় দেওয়া হচ্ছে। এটাই কেন্দ্রের কাছে শেষ সুযোগ।

বস্তুত, গত ২৭ অক্টোবরের নির্দেশেও রাজ্যগুলির সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে নীতি তৈরির জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। আজ সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল মাধবী দিভান একটি হলফনামা পেশ করেন। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশের প্রেক্ষিতে রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠকে পাওয়া তথ্য ওই হলফনামায় দেওয়া হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সেই মুহূর্তে অন্য মামলায় ব্যস্ত থাকায় তিনিই হলফনামাটি পেশ করছেন বলে মাধবী জানান।

Advertisement

সেই হলফনামা নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করে বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই হলফনামার কোথাও এমন ইঙ্গিত মিলছে না যে, আপনারা একটা প্রকল্প চালু করার কথা ভাবছেন। আপনারা তথ্য জোগাড় করছেন। আমরা ভারত সরকারের কাছে সারা দেশের জন্য একটা অভিন্ন মডেল চাইছি। কমিউনিটি কিচেনের প্রস্তাব নিয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করুন, আপনাদের প্রস্তাব দিন। পুলিশের মতো তথ্য জোগাড় করবেন না। এই সব তথ্য ইতিমধ্যেই রাজ্যগুলির দেওয়া হলফনামায় রয়েছে।’’ বিচারপতি কোহালি বলেন, ‘‘আপনারা কি হলফনামার শেষে লিখেছেন যে, আপনারা প্রকল্পটি বিবেচনা করবেন? সতেরো পাতার হলফনামায় তা নিয়ে সামান্যতম সাড়াশব্দও নেই।’’ হলফনামাটি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় খাদ্য ও ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রকের আন্ডার সেক্রেটারি। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ বেঞ্চ বলেছে, সেটি দেওয়া উচিত ছিল মন্ত্রকের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘এই শেষ বার ভারত সরকারকে সাবধান করে দিচ্ছি। আন্ডার সেক্রেটারি হলফনামা দিলেন! আপনাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তা দিতে পারলেন না! কত বার বলতে হবে?’’ এই সময়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বেণুগোপাল ভার্চুয়াল মাধ্যমে শুনানিতে যোগ দিলে তাঁকেও প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘দয়া করে বলবেন, এখন কী করব?’’

অ্যাটর্নি জেনারেল জানান, কেন্দ্র সুসংহত প্রকল্প আনবে। জাতীয় খাদ্যসুরক্ষা আইনের কাঠামোর মধ্যেই তা করা হবে। প্রধান বিচারপতি জানান, এই প্রকল্পের বিধিবদ্ধ কাঠামো প্রয়োজন, যাতে নীতি পাল্টানোর কারণে তা বন্ধ না হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যগুলিকে সঙ্গে নেওয়া না হলে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু করতে পারবে না। তাই আমরা বৈঠক ডেকে নীতি তৈরি করতে বলেছিলাম। আপনারা যদি ক্ষুধার বিষয়টিতে নজর দিতে চান, কোনও সংবিধান বা আইন তাতে বাধা হবে না। ইতিমধ্যেই দেরি হয়ে গিয়েছে। স্থগিতাদেশে লাভ হবে না। আপনাদের দু’সপ্তাহের চূড়ান্ত সময় দিচ্ছি। দয়া করে বৈঠকটা করুন। খেতে না পেয়ে মরতে চলা মানুষগুলোকে খাবার জোগানো প্রতিটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব— এটাই প্রথম নীতি।’’ বৈঠক এবং নীতি চূড়ান্ত করার জন্য তিন সপ্তাহ সময় চান অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত তা মঞ্জুর করে।

প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দেন যে, আদালত অপুষ্টির কথা বলছে না। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে দেখা গিয়েছিল, ১১৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম স্থানে রয়েছে ভারত। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশও ভারতের থেকে এগিয়ে। অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শিশুমৃত্যুর হারের মতো বিষয়ের উপরে নির্ভর করে হওয়া ওই সমীক্ষার ফলাফল অবশ্য মানতে চায়নি ভারত সরকার। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘একটা অস্পষ্টতা রয়েছে। ভাববেন না এটা অপুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়। যা বলা হচ্ছে, তা ক্ষুধা নিয়ে। লোকে না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। দু’টোকে গুলিয়ে ফেলবেন না।’’ আবেদনকারীদের আইনজীবী অসীমা মান্ডলা জানান, বিভিন্ন রাজ্যের প্রকল্প খতিয়ে দেখে তাঁরাও কিছু প্রস্তাব রেখে একটি নোট তৈরি করেছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে সেগুলিও বিবেচনা করতে বলেছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement