গতিমান এক্সপ্রেস
মিছরির বদলে আপাতত মুড়িরই ব্যবস্থা হচ্ছে। অর্থাৎ বুলেট নয়, সেমি-বুলেট ট্রেন চালিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছে আংশিক ভাবে পূরণ করার পথ খুঁজেছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।
নাম ‘গতিমান এক্সপ্রেস’। এই সেমি-বুলেট ট্রেনটি চলবে দিল্লির হজরত নিজামুদ্দিন স্টেশন এবং আগরার মধ্যে। ২০০ কিলোমিটার পথ পেরোতে ট্রেনটি সময় নেবে মাত্র এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট। পরিকাঠামোর কিছুকিঞ্চিৎ পরিবর্তন করেই চালানো হবে দেশের প্রথম সেমি-হাইস্পিড ট্রেন গতিমান। কাল, মঙ্গলবার নিজামুদ্দিনে সবুজ পতাকা নেড়ে তার দৌড় শুরু করিয়ে দেবেন রেলমন্ত্রী।
মিছরি নয় কেন? সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ফারাক যে বিস্তর! ক্ষমতায় এসেই বুলেট ট্রেন চালু করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু না আছে পরিকাঠামো, না আর্থিক সঙ্গতি। তাই প্রধানমন্ত্রীর মুখরক্ষায় চলতি বছরের রেল বাজেটে আপাতত সেমি-বুলেট ট্রেন চালানোর কথাই ঘোষণা করেন প্রভু। তবে তিনি জানান, বুলেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনাটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রেল সূত্রের খবর, গতিমান এক্সপ্রেস চলবে ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার গতিবেগে। যা ২০০ কিলোমিটার পথ পেরোবে মাত্র ১০০ মিনিটে। ট্রেনটি চলাচল করবে সপ্তাহে ছ’দিন। প্রতিদিনই সকাল ৮টা ১০ মিনিটে সেটি ছাড়বে নিজামুদ্দিন স্টেশন থেকে। ফিরতি পথে আগরা থেকে ট্রেনটি ছাড়বে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে। শুক্রবার চলবে না গতিমান।
বুলেট না-হোক, সেমি-বুলেট এই ট্রেনে গতি-মাদকতার স্বাদ কিছুটা অন্তত মিলবে বলেই রেলকর্তাদের দাবি। রেল সূত্রের খবর, ট্রেনটি চালানো হবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অশ্বশক্তির বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন দিয়ে। থাকবে দু’টি এগ্জিকিউটিভ এসি চেয়ার-কার আর আটটি এসি চেয়ার-কার। গতির উন্মাদনা সহযোগে সুসজ্জিত কামরায় ভ্রমণের আরামের সঙ্গে যাত্রীরা পাবেন রসনা তৃপ্ত করার নানান উপকরণ। প্যান্ট্রির আধুনিক কেটারিং ব্যবস্থায় থাকছে জিভে জল আনা আয়োজন। গমের উপমা থেকে শুরু করে ধোসা, কাঞ্জিভরম ইডলি, সুইস রোল, চিকেন রোল থেকে নানা ধরনের আমিষ ও নিরামিষ পদ মিলবে। হরেক তাজা ফলের সঙ্গেই থাকবে আখরোট, কাজু, পেস্তা, বাদামের মতো শুকনো ফল।
গতিমানে আয়োজন আর আপ্যায়নের বন্দোবস্ত বিমান সফরের সঙ্গে তুলনীয় হবে বলে রেলের দাবি। এমনকী বিমানযাত্রার আমেজ আনতে এয়ারহস্টেস বা বিমানবালাদের মতো ‘রেল হস্টেস’ বা রেলবালারও ব্যবস্থা থাকছে গতিমানে। ট্রেনের ভিতরে যাত্রীদের যাবতীয় পরিষেবা দেবেন তাঁরাই। এক পদস্থ রেলকর্তা জানান, গতিমানের যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে গোলাপ দিয়ে। প্রতিটি আসনে থাকবে সঙ্গীতের সংযোগ।
বিশ্ব ঐতিহ্যের তাজমহলে পর্যটক টানতে এমন একটি চোখধাঁধানো ট্রেনে এলাহি বন্দোবস্ত করে ভাঁড়ারের অবস্থা ফেরাতে চাইছে রেল। কিন্তু কেমন ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের?
রেলের খবর, শতাব্দী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনগুলির চেয়ে গতিমানের ভাড়া হবে ২৫ শতাংশ বেশি। চেয়ার-কারে ভাড়া হবে ৬৯০ টাকা আর এগ্জিকিউটিভ চেয়ার-কারে ১,৩৬৫ টাকা। আপাতত দিল্লি-আগরা দিয়ে এই ট্রেন প্রকল্প শুরু। ক্রমে ক্রমে চণ্ডীগড়-দিল্লি, হায়দরাবাদ-চেন্নাই, নাগপুর-বিলাসপুর, গোয়া-মুম্বই ও নাগপুর-সেকেন্দরাবাদের মতো আরও ন’টি রুটে গতিমান এক্সপ্রেস চালানোর পরিকল্পনা আছে রেলের।