নয়ডার সেই যমজ বহুতল। ফাইল চিত্র।
যমজ অট্টালিকা ধ্বংস ঘিরে অপেক্ষার প্রহর গুনছে নয়ডা-সহ গোটা দেশ। রবিবাসরীয় দুপুরে মাত্র ন’সেকেন্ডেই কুতুব মিনারের থেকেও উঁচু এই বহুতল নিমেষে গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। বিস্ফোরক দিয়ে বহুতল গুঁড়িয়ে দেওয়া ঘিরে প্রশাসনের তরফে আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও অট্টালিকা সংলগ্ন এলাকাবাসীদের কারও কারও মনে আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। বহুতল ধ্বংসের পর জনস্বাস্থ্যে কী প্রভাব পড়বে? আশপাশের বাড়িগুলি আদৌ সুরক্ষিত থাকবে তো? এমনই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে স্থানীয়দের মধ্যে।
নয়ডার ফর্টিস হাসপাতালের ‘পালমোনোলজি অ্যান্ড ক্রিটিক্যাল কেয়ারে’র প্রধান চিকিৎসক মৃণাল সরকার বলেছেন, ‘‘এ ধরনের বড় নির্মাণ যখন ধ্বংস করা হয়, তখন ধুলো থাকবেই। সেই সঙ্গে ধোঁয়াও থাকবে। কারণ, বহুতল ভাঙতে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে বাতাসের দিকটা গুরুত্বপূর্ণ।’’ তাঁর কথায়, যদি এটা ভূ-গর্ভস্থ হত, তা হলে প্রযুক্তির সাহায্যে নিষ্কাশন কৌশল কাজে লাগানো হত। ফলে বাতাসে তার কোনও প্রভাব পড়ত না। যেমনটা খনিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়। তাঁর মতে, ‘‘ধুলো ও ধোঁয়া বাতাসে মিশবে এবং তা ছড়াবে। অট্টালিকা ধ্বংসের কাজে যে বিশেষজ্ঞরা যুক্ত রয়েছেন, আশা করব, তাঁরা এ ব্যাপারে যত্নশীল।’’
বস্তুত, অট্টালিকা ধ্বংসে আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্য ইতিমধ্যেই সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন। রবিবার সকাল ৭টা থেকেই বাসিন্দাদের নিরাপদে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। বহুতল ভাঙার কয়েক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাসিন্দাদের আবার ফেরানো হবে। এই প্রসঙ্গে ওই চিকিৎসক বলেছেন, ‘‘আগাম সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে। আশা করব, বাসিন্দারাও সতর্ক। বাড়িগুলির ছাদ ঢাকা দরকার। এতে ধুলোর সরাসরি প্রভাব থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।’’ নয়ডা প্রশাসনের তরফে অট্টালিকা সংলগ্ন এলাকার বাড়িগুলির দরজা-জানলা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তার পরও বাড়ির মধ্যে ধুলো ঢুকলে তা ভাল করে পরিষ্কার করতে হবে। যাদের হাঁপানির সমস্যা রয়েছে, তাঁদের অন্যত্র থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অট্টালিকা ধ্বংসের পর আশপাশের বাড়িগুলি পরীক্ষা করা হবে। ইতিমধ্যেই আশপাশের বাড়িগুলিতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, বহুতল ধ্বংসের পর ধুলো দূর করতে জলের ট্যাঙ্কার, ‘স্মগ গান’ ব্যবহার করা হবে। রাস্তায় ধুলোর আস্তরণ সাফ করতে বিশেষ ধরনের যন্ত্রের সাহায্য নেওয়া হবে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বহুতল ভাঙার পর যে ধ্বংসস্তূপ থাকবে, তা তিন মাসের মধ্যে পরিষ্কার করা হবে।
প্রসঙ্গত, নয়ডার ওই যমজ বহুতল বেআইনি ভাবে নির্মিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। দু’টি টাওয়ারের মধ্যে দূরত্ব ১৬ মিটার থাকা দরকার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেই দূরত্ব মাত্র ন’মিটার। শেষমেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রবিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ ভেঙে ফেলা হবে এই বহুতল।