এক বস্তা সিমেন্টের দাম ৮ হাজার টাকা!

অরুণাচলের চাংলাং জেলার বিজয়নগর শহরে এক বস্তা সিমেন্ট কিনতে ক্রেতাকে পকেট থেকে বার করতে হবে এই টাকা। তা-ও যদি সিমেন্ট বাজারে থাকে!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৭
Share:

অরুণাচলের চাংলাং জেলার বিজয়নগর শহরে এক বস্তা সিমেন্ট কিনতে ক্রেতাকে পকেট থেকে বার করতে হবে আট হাজার টাকা। তা-ও যদি সিমেন্ট বাজারে থাকে!

Advertisement

সৌজন্য, শৌচাগার তৈরির প্রকল্প। শৌচালয় পাকা করতে হলে আনতে হবে সিমেন্ট। সেই সিমেন্ট আনতে হবে বস্তা পিঠে বয়ে। পাহাড়-জঙ্গলে ১৫৬ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে। সমতলের ৫০০ টাকার বস্তার দাম শেষ পর্যন্ত পড়বে ৮০০০ টাকা!

দুর্গম এই এলাকায় শুধুই প্রতিবন্ধকতার ছবি। এখানে বসবাস করেন চাকমা-হাজং শরণার্থীরা, যাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চালাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠন। অন্য দিকে রয়েছে নাগা জঙ্গিদের দৌরাত্ম্য। রাজ্য সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশ্যে শৌচকর্ম বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু সরকার তো নির্দেশ দিয়েই খালাস। মাথায় হাত জেলা প্রশাসন ও পূর্ত দফতরের।

Advertisement

আরও পড়ুন: তথ্য ফাঁস, মানলেন আধার কর্তৃপক্ষ

মাত্র হাজার দেড়েক লোকের বাস বিজয়নগরে। সপ্তাহে এক দিন নিত্যপণ্য ও খাবার নিয়ে হেলিকপ্টার আসে সেখানে। তা-ও নির্ভর করে আবহাওয়ার উপরে। বাকি সামগ্রীর জন্য ভরসা চাকমা মালবাহকেরা। সমতল থেকে জিনিস কিনে, পিঠে চাপিয়ে হেঁটে তাঁরা রওনা হন নামদাফা জাতীয় উদ্যানের উদ্দেশে। পাহাড়-জঙ্গল ভেঙে, মাত্র পাঁচ দিনে দেড়শো কিলোমিটার রাস্তা পার করে বিজয়নগরে আসেন।

পূর্ত দফতরের ইঞ্জিনিয়ার জুমলি আদো, বরদুমসার গাঁওবুড়া সেখেপরা জানাচ্ছেন, নিকটবর্তী পাহাড়ি সড়ক থেকে বিজয়নগর আসতে সাধারণ মানুষের দু’দিন পায়ে হাঁটা ছাড়া গতি নেই। তাই এখানে দারিদ্র্য যেমন বেশি, তেমনই নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর দামও কয়েক গুণ চড়া। খাদ্য সুরক্ষার সুবিধে এখানে পৌঁছয় না। চাংলাং জেলার অনেক অংশেই জিনিসপত্র দুর্মূল্য। ২০ টাকা কিলোর নুন বিজয়নগর-সহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকায় ২৫০ টাকা!

এ হেন বিজয়নগরে পাকা শৌচালয় গড়তে পূর্ত দফতরের হিসেবে খরচ দাঁড়াচ্ছে শৌচালয়প্রতি অন্তত ৪০ হাজার টাকা। কারণ এক বস্তা সিমেন্টের দাম পড়ছে আট হাজার। কমোডের দাম দু’হাজার। সে দিক থেকে স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে দেশের সবচেয়ে দামি শৌচালয় প্রকল্প বিজয়নগরেই! এ দিকে, শৌচালয় গড়তে কেন্দ্র দেয় ১০,৮০০ টাকা। রাজ্য দেয় ৯,২০০ টাকা। এখানে বাকি টাকা কে জোগান দেবে, তা নিয়েই চিন্তায় জেলা প্রশাসন।

চাংলাংবাসীদের অভিযোগ, অরুণাচলপ্রদেশের সাংসদ তথা দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বারবার ফলাও করে সীমান্ত এলাকার উন্নয়নের কথা বললেও যে-সব এলাকায় যাওয়ার রাস্তাই এত বছরে তৈরি হয়নি, সেখানে উন্নয়নের সামান্য আলো পৌঁছনো সম্ভব নয়। চিন, ভুটান, মায়ানমারের সঙ্গে ১৬৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে অরুণাচলের। সীমান্ত ঘেঁষা গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের সিংহভাগই রোজগার ও ভালভাবে বাঁচার আশায় অন্যত্র পাড়ি দিয়েছেন। সীমান্ত সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে কেন্দ্র সীমান্তঘেঁষা ১০০ গ্রামে ফের জনবসতি গড়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

রাজ্যের গণবণ্টনমন্ত্রী কামলুং মোসাং নিজেই মিয়াও কেন্দ্রের বিধায়ক। রাস্তা না-থাকা ও কষ্টকর জীবনযাত্রার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল তিনি। মোসাং জানান, রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ওই এলাকায় সড়ক নির্মাণ প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। আর ইঞ্জিনিয়ার জুমলি আদো জানিয়েছেন, এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বিজয়নগরে শৌচাগার তৈরির কাজ খুব দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। শুধু তাই নয়, ডিসেম্বরের মধ্যেই খোলা জায়গায় শৌচকর্ম মুক্ত রাজ্য হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অরুণাচল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement