জোট-জট

মহারাষ্ট্রে হিসেব মেলাতে পারছে না কোনও দলই

প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হাতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। অথচ এখনও জোট জটে আটকে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন। জট যেমন বিরোধী শিবিরে, তেমনি শাসক জোটেও। এমনকী, বিজেপি-শিবসেনার জোট শেষমেশ টেকে কিনা, সে দিকেও নজর রাখছে শাসক জোটের দুই দল। তা না হলে, পৃথক ভাবে ভোটে লড়তে পারে কংগ্রেস ও এনসিপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:০৭
Share:

প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে হাতে আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। অথচ এখনও জোট জটে আটকে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন। জট যেমন বিরোধী শিবিরে, তেমনি শাসক জোটেও। এমনকী, বিজেপি-শিবসেনার জোট শেষমেশ টেকে কিনা, সে দিকেও নজর রাখছে শাসক জোটের দুই দল। তা না হলে, পৃথক ভাবে ভোটে লড়তে পারে কংগ্রেস ও এনসিপি।

Advertisement

রাতের খবর, নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে দিল্লিতে বিজেপির সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে মহারাষ্ট্রে একা চলার বিকল্প রণনীতিও স্থির হয়েছে। শিবসেনার সঙ্গে জোটের চেষ্টা চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। তবে তার সঙ্গেই থাকছে সব আসনে লড়ার প্রস্তুতি। অমিত শাহ গোটা বিষয়টি নিয়ে মহারাষ্ট্রে দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন।

মহারাষ্ট্রে ১৫ বছর ধরে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস-এনসিপি জোট। একে সরকারের বিরুদ্ধে বিপুল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা, তার ওপর জোটের সম্পর্কে টানাপড়েনসব মিলিয়ে এ বার তাদের জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই ধরে নিয়েছেন। তা ছাড়া, লোকসভা ভোটের পর রাজ্যে এই দুই দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসেও প্রবল ভাঁটার টান রয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই সম্ভাব্য জয়ের গন্ধ পেয়ে বিজেপি-শিবসেনার মধ্যেও জট জটিলতা বেড়ে গিয়েছে।

Advertisement

শুধু ক্ষমতায় ফেরা নয়, বালসাহেব ঠাকরের পুত্র উদ্ধব চাইছেন, এ বার নির্বাচনে তাঁর রাজনৈতিক কর্তৃত্ব কায়েম করতে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির তুলনায় বরাবরই বড় শক্তি শিবসেনা। এ জন্য তারা যেমন বেশি আসনে লড়তে চাইছে, তেমনই উদ্ধব চান, ভোটের আগেই তাঁকে জোটের তরফে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দেওয়া হোক।

সমস্যা সেখানেই। মহারাষ্ট্রে বিধানসভায় ২৮৮টি আসন রয়েছে। সূত্রের খবর, শিবসেনা শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে ১১৯টি আসন ছাড়তে রাজি হয়েছে। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নন অমিত শাহ। গোড়ায় বিজেপির দাবি ছিল, দুই দল ১৩৫টি করে আসনে লড়ুক। বাকি ১৮টি আসন ছেড়ে দেওয়া হোক চারটি ছোট শরিক দলের মধ্যে। সেই অবস্থান থেকে কিছুটা নরম হয়ে বিজেপি এখন ১৩০টি আসন দাবি করছে। তবে বিজেপি স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের ফলাফলে যার আসন বেশি থাকবে, সেই দলই মুখ্যমন্ত্রীর পদ পাবে। লোকসভায় মহারাষ্ট্রে শিবসেনার থেকে বেশি আসনে জিতেছে বিজেপি। সে জন্যও তারা আপস করতে রাজি নয়।

শিবসেনাও নাছোড়। তাদের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের মতো মোদী ঝড় যে নেই, কয়েকটি উপনির্বাচনে তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। সুতরাং শরিকদের মর্যাদা দিক বিজেপি। বিজেপি সূত্রে বলা হয়, “শিবসেনা সংবাদমাধ্যমে বিবৃতির মাধ্যমে দর কষাকষি না করে মুখোমুখি আলোচনায় বসুক।” মোদ্দা বিষয় হল, মুখ্যমন্ত্রী পদের নাম ঘোষণাকে নিয়েই উভয় শিবিরে আপাতত স্নায়ুর লড়াই চলছে।

পাশাপাশি, কংগ্রেস-এনসিপি জোট গড়ে ১৫ বছর সরকার চালিয়ে দিলেও এখন তাদের পরস্পরের প্রতি প্রবল অবিশ্বাস কাজ করছে। এ বারের লোকসভা ভোটে মহারাষ্ট্রে মাত্র দুটি আসন জিতেছে কংগ্রেস। এনসিপি জিতেছে ৫টি আসনে। তাই এনসিপির দাবি, মোট বিধানসভা আসনের ৫০ শতাংশ তথা ১৪৪টি আসন তাদের ছেড়ে দিতে হবে। যদিও এতে কোনও মতেই রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বড় জোর ১২৪টি আসন এনসিপিকে ছাড়তে পারে কংগ্রেস। এই সূত্রেই ২০০৪ সালে বিধানসভার ভোটে লড়েছিল দুই দল।

মজার বিষয় হল, আসনরফা নিয়ে শাসক জোটের এই টানাপড়েন দু’মাস ধরেই চলছে। বার বার আলোচনার পরেও এক চুল অগ্রগতি হয়নি। কংগ্রেস সূত্র বলছে, এর অন্যতম কারণ হল, শরদ পওয়ার দেখে নিতে চাইছেন, শেষমেশ বিজেপি-শিবসেনা জোট হয় কিনা। যদি না হয়, তা হলে সরকার গড়তে তিনি ভোটের পর অনায়াসে বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবেন। এমনকী, ভোটে পৃথক লড়তে হয় যদি, তার ক্ষেত্র তৈরি করতে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী চহ্বাণের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন শরদ পওয়ারের ভাইপো এবং রাজ্যের উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার।

এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ এবং কংগ্রেসের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের একাধিক নেতা সনিয়া-রাহুলকে জানিয়েছেন, পৃথক ভাবে ভোটে লড়াই ভাল হবে। কারণ, ভোটে জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। তা ছাড়া এনসিপি-র গতিবিধি সন্দেহজনক। তাই হারতে যখন হবেই তখন পৃথক ভাবে ভোটে লড়েই দেখা যাক না। কারণ এক, জোট ভেঙে গেলে এনসিপির মন্ত্রীদের দুর্নীতির দায় নিতে হবে না। দুই, মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী নিয়ে এক মাত্র ধন্ধে নেই কংগ্রেস। তিন, ত্রিমুখী বা চতুর্মুখী লড়াই হলে ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মা দিয়ে কংগ্রেসের অনেক বিধায়ক ও নেতা জেতার চেষ্টা করবেন। ঠিক যেমন, লোকসভা ভোটে জিতেছেন প্রাক্তন কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী অশোক চহ্বাণ।

তবে এখনও জোট ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করতে পারেননি সনিয়া। বরং তিনিই পৃথ্বীরাজ চহ্বাণদের আপাতত ঠেকিয়ে রেখেছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সনিয়া-রাহুলও দেখে নিতে চাইছেন শেষ পর্যন্ত বিজেপি-শিবসেনা জোট হয় কি না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement