—প্রতীকী চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের বিজেপি শাসিত যোগী আদিত্যনাথ সরকারের ধর্মান্তরবিরোধী আইন ঘিরে বিতর্কের পারদ ক্রমশ বাড়ছে। আইনটিকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের অভিযোগও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিতর্কিত এই আইনকে হাতিয়ার করেই এগোনোর ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজ্যের বিজেপি সরকার।
মোরাদাবাদে বিয়ে করতে যাওয়ার পথে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বজরং দলের লোকেদের হাতে বিস্তর নিগ্রহের পরে ‘ধমান্তরণে’র অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তিকে এ দিনই মুক্তি দিয়েছে আদালত। তাঁর বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরণের কোনও প্রমাণ আদালতে জমা দিতে পারেনি যোগী সরকারের পুলিশ। সপ্তাহ দুয়েক আগে বিয়ে করতে যাওয়ার পথে মোরাদাবাদের ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জোর করে ধর্মান্তরণের অভিযোগ তুলে তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে মারধর করে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির সদস্যরা। এর পরে যোগী সরকারের নতুন আইনকে হাতিয়ার করে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ব্যক্তির স্ত্রীকে বিস্তর নিগ্রহের পরে পুলিশ পাঠিয়ে দেয় সরকারি মহিলা আশ্রয়কেন্দ্রে। সেখানেই তাঁর গর্ভপাত হয়েছে বলে মহিলা অভিযোগ করলেও উত্তরপ্রদেশ পুলিশ তা উড়িয়ে দেয়। পরে অবশ্য ডাক্তারি রিপোর্ট সামনে এলে দেখা যায়, মহিলাই সত্যি কথা বলেছিলেন। এই অবস্থায় গ্রেফতারের দু’সপ্তাহ বাদে আদালতের নির্দেশে মুক্তি পেয়ে ধৃত ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমার আর কী আর বলার আছে! আমরা পরস্পরের সম্মতিতেই বিয়ে করেছিলাম। ১৫ দিন জেল খাটলাম।”
একই ভাবে এ দিনই আদালতের নির্দেশে স্বস্তি পেয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা নাদিম এবং তাঁর ভাই। তাঁদের বিরুদ্ধেও জোর করে ধর্মান্তরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে মুজফ্ফরনগরের বাসিন্দা এবং একটি নামকরা সংস্থার কর্মী অক্ষয় কুমার ত্যাগীর দাবি ছিল, তাঁর স্ত্রীকে নাদিম নামে ওই শ্রমিক নানা ভাবে ‘প্রেমের ফাঁদে ফেলে’ ও প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তর করে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছে। এমনকি তাঁর স্ত্রীকে একটি স্মার্টফোনও কিনে দিয়েছে নাদিম। এর পরেই আদালতের দ্বারস্থ হন নাদিম। এলাহাবাদ হাইকোর্ট এ দিন এক রায়ে জানিয়েছে, পরবর্তী শুনানি না-হওয়া পর্যন্ত নাদিমকে গ্রেফতার করতে পারে না পুলিশ। আদালতের বক্তব্য, মহিলা প্রাপ্তবয়স্ক এবং তাঁর নিজস্ব কিছু সিদ্ধান্ত থাকতেই পারে। তা ছাড়া, নাদিম তাঁকে জোর করছে, এমন প্রমাণও মেলেনি।
একই দিনে পরপর দু’টি এ ধরনের ঘটনার পরেও অবশ্য হাত গুটিয়ে নেই উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এ দিনই গ্রেটার নয়ডায় এক বিদেশি-সহ ৪ জনকে ধর্মান্তরবিরোধী আইনে গ্রেফতার করেছে নয়ডা পুলিশ। অভিযোগ, তাঁরা ধর্মান্তরণের জন্য বিভিন্ন লোককে প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন। ধৃতদের মধ্যে এক মহিলা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক বলে জানিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি এ দিনই শাহজাহানপুরের মহম্মদ সইদ নামে এক ব্যক্তিকে ধর্মান্তরবিরোধী আইনে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তি নিজের পরিচয় গোপন করে এক মহিলাকে ধর্মান্তর করে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। মহিলার সঙ্গে যৌন সংসর্গও করেন তিনি। কিন্তু ৪৫ বছর বয়সি ওই মহিলা ধর্মান্তর করতে রাজি না-হওয়ায় তাঁকে দিয়ে জোর করে একটি ‘নিকাহনামা’য় সই করিয়ে নেন সইদ। এর পরেই মহিলা দ্বারস্থ হন আর একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের। ওই সংগঠনের সদস্যরাই মহিলাকে সঙ্গে করে থানায় যায়। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে মহম্মদ সইদ এবং এক কাজি-সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সইদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
‘লাভ জেহাদ’-এর বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরেই সক্রিয় হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি। তার মধ্যেই কয়েক মাস আগে হরিয়ানায় এক তরুণীর মৃত্যুর পরে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কর্নাটক ‘লাভ জেহাদ’ ঠেকাতে কড়া আইন আনার চিন্তাভাবনা শুরু করে। উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথ সরকার ‘ধর্মান্তরণ-বিরোধী’ আইন এনে একের পর এক গ্রেফতার শুরু করে। এই অবস্থায় অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে, সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করতেই নয়া এই আইন নিয়ে সক্রিয় হয়েছে বিজেপি শাসিত রাজ্য সরকারগুলি।