পুত্রের দেহ নিয়ে হাসপাতালে ধর্নায় বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
বিজেপিশাসিত রাজ্যে শয্যার অভাবে সরকারি হাসপাতালে পুত্রকে ভর্তি করাতে পারলেন না বিজেপিরই প্রাক্তন সাংসদ। ছটফট করে চোখের সামনেই মৃত্যু হল পুত্রের। আর এই ঘটনাই প্রশ্ন তুলে দিল উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে।
হাসপাতালে পুত্রকে ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের বান্দার প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ভৈরোঁ প্রসাদ মিশ্র। কিন্তু অভিযোগ, তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হসাপাতালে কোনও শয্যা নেই। ভর্তি করানো সম্ভব নয়। ভর্তি করাতে না পারায় চিকিৎসার অভাবেই মৃত্যু হল সাংসদের পুত্রের। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে লখনউয়ের এসজিপিজিআই হাসপতালে।
পুলিশ সূত্রে খবর, কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন রাজ্যের এই প্রাক্তন সাংসদের পুত্র। সোমবার শারীরিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় রাত ১১টা নাগাদ লখনউয়ের ওই সরকারি হাসপাতালে পুত্রকে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে যান। অভিযোগ, জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে সেখান থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালে কোনও শয্যা নেই, অতএব ভর্তি করানো সম্ভব নয়। শুধু তাই-ই নয়, হাসপাতালের স্বাস্থ্য আধিকারিকও এ বিষয়ে কোনও সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ছাটফট করতে করতে চোখের সামনে মৃত্যু হয় পুত্রের।
পুত্রের মৃত্যুর পরই জরুরি বিভাগের সামনে তাঁর দেহ নিয়ে ধর্নায় বসেন। চিকিৎসককে শাস্তি না দেওয়া হলে হাসপাতাল থেকে পুত্রের দেহ নিয়ে সরবেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “পুত্রকে হারিয়েছি। কিন্তু পুত্রের দেহ নিয়ে ধর্নায় বসেছি। এই প্রতিবাদ হাসপাতালের পরিষেবার বিরুদ্ধে। আমার মতো যাতে কেউ এই পরিস্থিতির শিকার না হন, তার জন্যও এই প্রতিবাদ।” প্রাক্তন সাংসদ আরও জানান, তিনি ধর্নায় বসতেই বেশ কিছু রোগীর আত্মীয়রা তাঁর কাছে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে যত ক্ষণ না কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তত ক্ষণ পর্যন্ত এ ভাবে পুত্রের দেহ নিয়ে ধর্নায় বসে থাকবেন বলেও জানান তিনি। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় লখনউয়ে।
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত চিকিৎসককে সাসপেন্ড করেন। ঘটনাটি তদন্তের জন্য তড়িঘড়ি তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়। হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক আর কে ধীমান বলেন, “পুত্রকে আইসিইউতে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল প্রাক্তন সাংসদকে। এমনটাই আমার কাছে দাবি করেছেন চিকিৎসক। কিন্তু আইসিইউতে কোনও শয্যা ফাঁকা নেই, এই কথা কেন বলা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্ত চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।”
এই ঘটনা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এই ঘটনার জন্য রাজ্যের বিজেপি সরকারকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, “এটি হাসপাতালের গাফিলতি নয়। এই গাফিলতি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের।” এর পরই অখিলেশ প্রশ্ন তোলেন, কেন সরকারি হাসপাতালগুলিতে অর্থ বরাদ্দ করা হয় না? দলের প্রাক্তন সাংসদ ভৈরোঁ প্রসাদের বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য। তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।”