বিরলতম অপরাধের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসি রদে অনমনীয় অবস্থান নিল মোদী সরকার। এ নিয়ে ইউপিএ সরকারের মতোই কঠোর পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।
নিঠারি কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত সুরেন্দ্র কোহলি-সহ মোট ছ’জন ফাঁসির আসামি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে ফাঁসি রদের আর্জি জানান। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শ মেনে গত সপ্তাহে সেই আবেদন খারিজ করে দেন প্রণববাবু। রাষ্ট্রপতির সচিবালয় থেকে এ বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানাতেই দোষীদের ফাঁসি দেওয়ার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে এগারো জন ব্যক্তি প্রাণ ভিক্ষার জন্য তাঁর কাছে আবেদন করেন। সব ক’টি আবেদনই খারিজ করে দেন প্রণববাবু। সেই তালিকায় আজমল কসাভ ও আফজল গুরুর মতো অপরাধীদেরও নাম ছিল। এ বার ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে যে ছ’জন রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হয়েছেন, তাঁদের আবেদনে বাদ সেধেছেন খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। মন্ত্রক সূত্রের খবর, রাজনাথ সিংহ নিজেই গত ১৮ জুন ওই ব্যক্তিদের প্রাণ ভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দেওয়ার সুপারিশ করেন রাষ্ট্রপতির কাছে। কেন্দ্রের ওই সুপারিশ মেনে নেন প্রণববাবু। ছয় জনের ফাঁসির সাজা বহাল রাখারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, আবেদনকারীদের মধ্যে মহারাষ্ট্র থেকে যে তিন জন রয়েছেন তাঁদের মধ্যে দু’জন মহিলা। রেণুকা কুমারী ও সীমা নামে ওই দুই বোন একাধিক শিশুকে অপহরণ করে হত্যায় অভিযুক্ত। দোষী প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় দু’বোনকে। একই সাজা মেলে
ওই রাজ্যের রাজেন্দ্র প্রহ্লাদরাও ওয়াসনিক নামে এক ব্যক্তিরও। এক নাবালিকাকে ধর্ষণ ও প্রমাণ লোপে নির্মম ভাবে খুনের অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে হত্যায় অভিযুক্ত মধ্যপ্রদেশের জগদীশ নামে এক ব্যক্তিকেও ফাঁসির সাজা শোনায় আদালত।
উত্তরপ্রদেশের নিঠারি কাণ্ডের অন্যতম চক্রী সুরেন্দ্র কোহলির বিরুদ্ধে শিশুদের অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। এই অপরাধকে বিরলতম বলে উল্লেখ করে ফাঁসির আদেশ
দেয় আদালত। শেষ আবেদনকারী অসমের। হোলিরাম বরদলুই নামে ওই ব্যক্তি গত ১৯৯৬ সালে এক জনকে জ্বালিয়ে ও আর এক জনকে কুপিয়ে খুন করেছিলেন।
ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত মহারাষ্ট্রের দুই মহিলার আবেদনে প্রণববাবু কী অবস্থান নেন সে বিষয়ে কৌতূহল ছিল সব মহলেই। কিন্তু ওই দুই মহিলা-সহ সবার আবেদনই খারিজ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রাষ্ট্রপতি।
এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “সব দিক বিচার করেই আদালত ফাঁসির সাজা ঘোষণা করেছে। ওই আসামিরা বিরল থেকে বিরলতম অপরাধ করেছে।” ফলে নরম অবস্থান নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। নিঠারি বা নির্ভয়া কাণ্ডের পর সমাজের সব মহল থেকেই দাবি ওঠে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। ভারতীয় দণ্ডবিধিতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হল ফাঁসি। ওই কর্তার মত, সমাজ থেকে যে দাবি উঠেছে সেই দাবিকেও মর্যাদা দেওয়া সরকারের কর্তব্য। তা কোনও ভাবেই লঘু করা সম্ভব নয়।
রাষ্ট্রপতির কাছে আর্জি খারিজ হয়ে গেলেও, প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে ফের সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারেন সাজাপ্রাপ্তরা। ফাঁসির সাজা ঘোষণা ও তা বাস্তবায়িত হওয়ার মধ্যে অনেকটা দেরি হয়ে যাওয়ার যুক্তিতে দেশের শীর্ষ আদালতে যেতে পারেন ওই আসামিরা। ফাঁসির সাজা ঘোষণা হওয়ার পর দীর্ঘ সময় পর্যন্ত সেই আদেশ পালন না হলে সাজা বাতিল হয়ে যাওয়ার উদাহরণও রয়েছে।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই সুপ্রিম কোর্ট একটি রায়ে ১৫ জন ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত আসামির সাজা কমিয়ে দিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। সে সময় শীর্ষ আদালত ন্যূনতম সাত থেকে সর্বাধিক এগারো বছর পর্যন্ত ফাঁসির আদেশ পালন না হওয়ায় ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
কিন্তু এই ছ’জনের ক্ষেত্রে কী হতে পারে?
ছ’জন আবেদনকারীর মধ্যে ওয়াসনিক, সুরেন্দ্র কোহলি ও জগদীশ এই তিন জনের সাজা ঘোষণা হয়েছে ২০১২, ২০১১ ও ২০০৯ সালে। ফলে তাঁদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়কে ঢাল করে ফাঁসি এড়িয়ে যাওয়া কঠিন বলেই মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু হোলিরাম বরদলুই, রেণুকা ও সীমার ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়েছে যথাক্রমে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে। অর্থাৎ সাজা ঘোষণার পর কেটে গিয়েছে আট-নয় বছর। ফলে শেষের তিন জন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেও দেরির যুক্তিতে তাদের ফাঁসি রদ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।