দলের প্রতীক পাল্টাতে চাইছেন নীতীশ। দিল্লিতে গত দু’দিন ধরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারপরেই দলের তরফে প্রতীক পরিবর্তনের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের হাতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত নীতীশ কুমারের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। নীতীশ কুমার মনে করেন, সময়ের সঙ্গে প্রতীকের পরিবর্তন প্রয়োজন। নতুন প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে প্রতীক বাছাই করতে হবে। যাতে তাঁরা প্রতীকের সঙ্গে নৈকট্য বোধ করেন।
বিহার বিধানসভায় লালুপ্রসাদের দলের সঙ্গে জোট করে নির্বাচন জেতার পর থেকেই আগামী লোকসভাকে পাখির চোখ করতে চাইছেন নীতীশ কুমার। দলকেও সেই পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। এই কাজে তাঁকে মূলত সাহায্য করছেন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ প্রশান্তকিশোর। দলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনে নীতীশের প্রথম লক্ষ্য প্রতীক পরিবর্তন। সবুজ-সাদা পতাকার উপরে ‘তির’ চিহ্ন, বর্তমানে দলের এটাই প্রতীক। সেই প্রতীককে পাল্টে নতুন চিহ্ন তৈরি করছেন নীতীশের সহযোগী প্রশান্তের টিমের ডিজাইনাররা। তবে কবে নাগাদ সেই চিহ্ন জনসমক্ষে আসবে তা নিয়ে সকলেই ‘স্পিকটি নট’।
দলীয় প্রতীক পরিবর্তন ছাড়াও দলের নীতি, কর্মপদ্ধতি এবং আগামী নির্বাচনগুলিতে জোট তৈরি নিয়ে আলোচনার জন্যই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক ডেকেছিল জেডিইউ। গত কাল ও আজ, দু’দিন ধরে আলোচনা চলেছে সেখানে। মূলত বিহার-কেন্দ্রীক রাজনৈতিক দল জেডিইউ। আশপাশের রাজ্যেও সে ভাবে প্রভাব নেই। গত লোকসভা নির্বাচনেও কার্যত ভরাডুবি হয়েছে। তবে দলের দুই নেতা নীতীশ কুমার এবং শরদ যাদব জাতীয় রাজনীতিতে যথেষ্ঠ গুরুত্ব হারাননি। বিজেপির সঙ্গ ছেড়ে কংগ্রেস শিবিরে এসেও বিহারের ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছেন তাঁরা। এই দুই নেতাই কার্যত জেডিইউ চালান। বিহার নির্বাচন জেতার পরে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক দিল্লিতে করে দলের প্রভাব বাড়াতে চাইছে দল। আর শক্তি বাড়াতে মহাজোটের ‘ফর্মুলা’-কে ব্যবহার করতে চাইছেন তাঁরা। দু’দিন তাই আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
দলের এক নেতার কথায়, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় কোন দলের সঙ্গে যাওয়া হবে তা নিয়ে কিছু স্থির করা হয়নি। গোটা দায়িত্বটাই তুলে দেওয়া হয়েছে শীর্ষ নেতৃত্বের (পড়ুন, নীতীশের) হাতে। তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়া হবে না, নাকি কংগ্রেসের জোটে থাকবে তারা, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়েও সিদ্ধান্ত তিনিই নেবেন। আসলে দেশের রাজনীতিতে কিছুটা খালি জায়গা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নীতীশ কুমার। সেই ‘খালি জায়গা’র দখল নিতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। নীতীশ কুমার বলেন, ‘‘বিজেপি যে অপরাজয়ে নয়, সেটা বিহার নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। এ বার দেশ জুড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোট তৈরি করে আন্দোলন হবে।’’ জেডিইউ নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি পুরনো আদর্শ ছেড়ে গুজরাত মডেলে বিভেদের রাজনীতি শুরু করেছে। যা দেশ ও গণতন্ত্রের পক্ষে ভয়ঙ্কর। সেই প্রেক্ষিতেই নতুন জোট তৈরি ও তাঁর নেতৃত্বে এগিয়ে এসেছেন নীতীশ।