পরিবারের কোনও সদস্য মদ খেলেই পরিবারের সব প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যকে হাজতবাস করতে হতে পারে। এমন আইনই আনতে চলেছে বিহার সরকার। গত কালই রাজ্য বিধানসভায় ‘বিহার মদ্য নিষেধ ও আবগারি বিল, ২০১৬’ পেশ করেছে নীতীশ সরকার। এই বিল চারমাস আগে তৈরি মদ্যপান নিরোধক আইনকে আরও শক্তিশালী করবে বলে সরকারের দাবি। বিলে বলা হয়েছে: পরিবারের কোনও সদস্যকে মদ্যপ অবস্থায় পাওয়া গেলে ওই পরিবারের প্রাপ্তবয়স্কদেরও সাজা ভোগ করতে হবে। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহেই বিলটি নিয়ে আলোচনা হবে।
একের অপরাধে অন্যের শাস্তি! সরকারের এমন বিল নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। লালুপ্রসাদ নিজে বিষয়টি নিয়ে নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রাবড়িদেবী বিলের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িতে কেউ মদ খেলে পরিবারের সকলকে গ্রেফতার করা যায় নাকি!’’ বিজেপিও এই বিলের বিরোধিতা করেছে। বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী মদ নিয়ে নীতীশের ‘বাতিকগ্রস্ততা’-কে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, রামের অপরাধে শ্যামের কখনও শাস্তি হতে পারে না। বিজেপি সূত্রের ইঙ্গিত, আইন হলে তাকে আদালতে টেনে নিয়ে যাবেন তাঁরা।
৪৪ পাতার ওই প্রস্তাবিত বিলটি সমস্ত বিধায়কদের মধ্যে বিলিও করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে: কোনও ভাবে নেশার বিজ্ঞাপন দিলে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলে পাঁচ বছরের জেল এবং দশ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। মহিলা বা বালকদের নেশার দ্রব্য পাচার বা তৈরির জন্য ব্যবহার করলে যাবজ্জীবন কারাবাসও হতে পারে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিলটি সংবিধানের মূল কাঠামোরই বিরোধী কিনা তা নিয়েও। তবে সরকারি সূত্রের খবর, এই আইন ধোপে টিকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে অফিসাররাও এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু এ সবের কোনও কিছুতেই কান দিতে চাননি নীতীশ। আগামী উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এই মদ-রদই নীতীশের প্রচারের প্রধান হাতিয়ার। রাজ্যকে নেশামুক্ত করতে সমস্ত ক্ষমতার প্রয়োগ করতে চান তিনি। তাঁর দাবি, এতে জিডিপি-সহ সমস্ত ক্ষেত্রেই উন্নতি হবে। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের ধারণা, মদ নিয়ে তাঁর এই ধর্মযুদ্ধে নিজেকে রাজনৈতিক ভাবে ‘শহিদ’ করার চেষ্টা করছেন নীতীশ।