গলাগলি। নীতীশের শপথে কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী এবং আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। গাঁধী ময়দানে। ছবি: পিটিআই।
সূর্যের আলো নরম হয়ে এসেছে। শীতের ছোঁয়া গাঁধী ময়দানের গাছগাছালিতে। বছর চুরাশির লালধাঁসি যাদব কাঁধের চাদরটা ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নিলেন। চার দশক আগে এই গাঁধী ময়দানে জয়প্রকাশ নারায়ণের ‘সম্পূর্ণ ক্রান্তি’ আন্দোলনের সেই ঐতিহাসিক সভার সাক্ষী লালধাঁসি আজও বিশ্বাস করেন তাঁরই মতাদর্শে। আর জেপির সেই ধ্বজা নীতীশ কুমারই বহন করে চলছেন বলে মনে করেন তিনি। এ দিনই পঞ্চম বারের জন্য বিহারের ২৪তম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন নীতীশ কুমার। সেই শপথগ্রহণ পর্ব শেষ হতেই চোখে জল অশীতিপর বৃদ্ধের। তাঁর কথায়, ‘‘এর পরে আর কারও শপথগ্রহণ দেখার জন্য বেঁচে থাকব কিনা জানি না। তবে নীতীশকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখলে খুশি হব।’’
জনতার চিৎকার তখনও থামতেই চাইছে না। ফের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়া নীতীশ কুমারের নামে জয়ধ্বনি চলছেই। আবেগে ভাসছে গাঁধী ময়দান। শপথ বাক্য পড়া শেষ করে মুখের হাসিটা ধরে রেখেই মঞ্চে নির্দিষ্ট আসনে বসলেন নীতীশ। তবে এ বারের কাজটা যে খুব সহজ নয়, সেটা বিলক্ষণ বোঝেন তিনি। তাই আজ যেন আগের চেয়েও অনেক বেশি শান্ত। জনপ্রিয়তায় বিহারে তিনিই এক নম্বরে। সহজে এই জায়গা তৈরি হয়নি। প্রথম বার সাত দিনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। মাঝের বছর খানেক বাদ দিলে গত প্রায় এক দশকের টানা ইনিংস। গাঁধী ময়দানে হাজার তিরিশেক মানুষের সামনে শপথ নেওয়ার পরে লক্ষ্যটা অনেক দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে চাইছেন তিনি। আর সে কারণেই ২৮ জনের মন্ত্রিসভায় লালু প্রসাদের দুই ছেলেকে নিতে হয়েছে তাঁকে। ক্লাস নাইন পাশ করা লালুর ছোট ছেলেকে তেজস্বীকে উপ-মুখ্যমন্ত্রীও করতে হয়েছে! মন্ত্রিসভা গড়তে গিয়ে জাতপাতের সমীকরণও মাথায় রাখতে হয়েছে।
পড়ুন: কঠিন সময়ে তেজ দেখিয়েই উঁচু পদে তেজস্বী
গত কাল রাত থেকেই উৎসাহী সমর্থকেরা গাঁধী ময়দানের আশপাশে ভিড় জমানোর চেষ্টা করছিলেন। যদিও নিরাপত্তা কর্মীরা সেখানে কাউকে ভিড়তেই দিচ্ছিলেন না। অগত্যা গাড়িতে, ট্রেকারে, টেম্পোয় ‘ঢোল-বাজা’ নিয়েই চক্কর দিচ্ছিলেন তাঁরা। মাঝেমাঝে রাস্তাতেই নাচ। এ সবের মধ্যেই শপথ অনুষ্ঠানে ঢোকার একটা পাশের জন্য পরিচিত নেতাদের ফোন। যাঁর ভাগ্যে পাশ জুটেছে, তিনি তা অতি যত্নে সামলে রেখেছেন। পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র পবন মাহাতো তেমনই একজন ‘ভাগ্যবান’। ভিআইপি আসনে বসে বললেন, ‘‘এমন দিন জীবনে বড় একটা আসে না। আপনি যে নেতাকে পছন্দ করেন, যাঁকে আর্দশ মনে করেন, তাঁর শপথে থাকাটাই বড় কথা।’’
দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে এগিয়ে চলেছে। শপথ মঞ্চের পাশের ভিভিআইপি মঞ্চে একে একে নেতারা আসছেন। মীরাকুমার, অজিত যোগী, ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, বীরভদ্র সিংহ, তরুণ গগৈ, শরদ যাদব, শরদ পওয়ার, সুশীল মোদী, এম কে স্টালিন, টি আর বালু, রাম জেঠমলানি, তারিক আনোয়ার, সুখবীর সিংহ বাদল, ওমান চান্ডি, সীতারাম ইয়েচুরি, ডি রাজা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শীলা দীক্ষিত, অরবিন্দ কেজরীবাল, কে সিদ্ধারামাইয়া, ইবোবি সিংহ, বেঙ্কাইয়া নায়ডু-সহ দেশের তাবড় নেতারা হাজির। বরকর্তার মতোই লালু প্রসাদ অতিথি-অভ্যাগতদের দেখভাল করছেন। ছিলেন রাবড়ি দেবীও। অনুষ্ঠান শুরু হতেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা বেঙ্কাইয়া নায়ডুকে নিজের পাশে বসিয়েছেন। বিমান বিভ্রাটে শপথের শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীও।
পড়ুন: নিজস্বী তুলেও লালু-কাঁটাই চিন্তা নীতীশের
শপথ নিতে হাজির মন্ত্রীদের পরিবারবর্গও এসেছেন। সার দিয়ে বসে তাঁরা। সদ্য মন্ত্রী হওয়া অবধেশ সিংহের পাঁচ বছরের নাতি আদিত্য ‘দাদাজি জিন্দাবাদ, দাদাজি জিন্দাবাদ’ করে গোটা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। অনেকেই হেসে গাল টিপে দিলেন শিশুটির। এরই মাঝে লালুপ্রসাদের বড় ছেলে, তেজপ্রতাপকে ভুল উচ্চারণের জন্য ফের মন্ত্রগুপ্তির শপথবাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল রামনাথ কোবিন্দ!
গোটা ময়দান জুড়ে ওই একবারই স্তব্ধতা। ওইটুকুই যা বিঘ্ন!