বিহার বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার, উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব ও অস্থায়ী স্পিকার মহেশ্বর হাজারি। বুধবার পটনায়। ছবি: পিটিআই
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সব বিরোধীদের এক জোট হয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার আহ্বান করলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আজ বিহার বিধানসভায় আস্থা ভোটের আগে ওই আহ্বান করেন তিনি। নীতীশের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বিজেপি বিধানসভা ওয়াকআউট করায় ধ্বনি ভোটেই নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করে মহাজোট। নীতীশ জানান, মোদী সরকার কী ভাবে ভুল নীতি, জাতপাত ও ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি চালু রেখেছে তা তুলে ধরতে আগামী দিনে দেশ জুড়ে প্রচারে নামার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। রাজনীতির অনেকের মতে, নিজেকে বিরোধী শিবিরের মুখ হিসেবে তুলে ধরতেই দেশব্যাপী ওই প্রচারে নামার পরিকল্পনা নিয়েছেন নীতীশ।
তবে আস্থা ভোটের আগে আজ নীতীশের মহাজোটের অন্যতম বড় সঙ্গী আরজেডি-র তেজস্বী যাদব-সহ বিভিন্ন নেতার শপিং মল এবং সংস্থায় (দিল্লি ও গুরুগ্রামে) তল্লাশি চালায় সিবিআই। আস্থা ভোটে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই আজকের দিনে ওই তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তাঁদের বক্তব্য, বোঝাই যাচ্ছে, আরজেডি শিবিরের উপর চাপ বাড়াতে এই তল্লাশি। আগামী দিনে সিবিআইয়ের মাধ্যমে আরজেডি তথা নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে চাপে রাখার কৌশল নেবে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং তেজস্বীর মা রাবড়ী দেবী বলেন, ‘‘সিবিআই বা ইডি আমরা কাউকে ভয় করি না। কোনও তদন্তকারী সংস্থার চাপে মাথা নত করবে না দল।’’
সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে জোট ছেড়ে আরজেডি-কংগ্রেসের হাত ধরেছেন নীতীশ। আজ ছিল নতুন সেই মহাজোট সরকারের আস্থা ভোট। ২০২০ সালে বিহারে এনডিএ সরকারে বিধানসভার স্পিকার ছিলেন বিজেপির বিজয় কুমার সিংহ। তিনি পদে থাকলে আস্থা ভোটে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারেন, ওই যুক্তিতে আজ বিধানসভা অধিবেশন শুরু হতেই স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে শাসক শিবির। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ভোটাভুটির আগে পদ থেকে ইস্তফা দেন বিজয়। এরপরে বক্তৃতায় বর্তমান বিজেপি নেতৃত্বের তীব্র সমালোচনা করেন নীতীশ। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী জমানায় শরিকদের সম্মান করা হত। আমার প্রতিটি কথা সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হত। এখন বিজেপিতে আর সেই সংস্কৃতি নেই। এমনকি, এনডিতে আমাদের দল থেকে কে মন্ত্রী হবেন, তাও বিজেপি ঠিক করে দেওযার চেষ্টা করেছে।’’
বিজেপি শিবিরের দাবি, আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হতেই লোকসভার ঠিক আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসার ঝুঁকি নিয়েছেন নীতীশ। মুখ্যমন্ত্রী নিজে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা গোড়ায় উড়িয়ে দিলেও, আজ কার্যত বুঝিয়ে দেন, প্রয়োজনে বিরোধী শিবিরের হাল ধরতে রাজি আছেন তিনি। নীতীশের কথায়, ‘‘এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসায় বিরোধী দলের নেতারা আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। তাই আমি দেশের সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলকে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এক জোট হয়ে এগনোর আহ্বান করছি।’’
নীতীশের দেশব্যাপী প্রচারের পরিকল্পনা (অতীতে যা করতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তেলঙ্গনার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও) নিয়ে আজই কোনও মন্তব্য করতে চায়নি কংগ্রেস। যদিও ঘরোয়া ভাবে দল বলছে, নীতীশের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তা ছাড়া, লোকসভা নির্বাচনের দেরি রয়েছে। সময় ঠিক করে দেবে, বিরোধী জোটের মুখ কে হবেন।