বন্ধু: শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে নীতীশ কুমার ও সুশীল মোদী। বৃহস্পতিবার পটনায় রাজভবনে। ছবি: পিটিআই।
রাতভর নাটক শেষ হল শপথে।
প্রথমে ঠিক ছিল, আজ বিকেল পাঁচটায় শপথ নেবেন নীতীশ কুমার-সুশীল মোদী জুটি। স্থান: ঐতিহাসিক গাঁধী ময়দান। কিন্তু গভীর রাতে আচমকা পাল্টে গেল সময়সূচি। বদলে গেল শপথ-স্থলও। রাত একটায় ঠিক হল, পটনার রাজভবনে সকাল ১০টায় হবে শপথ অনুষ্ঠান। বিকেলের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের থাকার কথা ছিল। তাঁদের বাদ দিয়ে সাত মিনিটেই শেষ শপথ অনুষ্ঠান।
কেন এই তাড়া? বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলছেন, গত কাল কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ভোট-পূর্ববর্তী জোট ভেঙে নতুন জোট গড়েছেন নীতীশ। তিনি ফের শপথ নেওয়ার আগে বিধানসভার বৃহত্তম দল হিসেবে আরজেডি যাতে সরকার গড়ার দাবি পেশ করে জটিলতা বাড়াতে না পারে, সে জন্যই এই তৎপরতা।
উল্লেখ্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সামনে রেখে লালু-তেজস্বীরা কাল রাতেই ঘোষণা করেছিলেন, একক বৃহত্তম দল হিসেবে তাঁদের আগে সরকার গড়ার সুযোগ দিতে হবে। সেই মতো প্রস্তুতিও নিয়েছিল আরজেডি ও সহযোগী কংগ্রেস। রাজ্যপালের কাছ থেকে সাক্ষাতের সময় মিলেছিল আজ বেলা সাড়ে এগারোটায়। শুরু হয়েছিল অঙ্ক কষা। জেডিইউ-বিজেপি জোটের আসনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার থেকে মাত্র সাতটা বেশি। এই অবস্থায় দল ভাঙানোর তৎপরতা শুরু করেছিল আরজেডি। আর সে দিকে নজর রেখেই গোয়া বা মণিপুরে যে দ্রুততায় বিজেপি সরকার গড়েছিল, সেই একই রকম দ্রুততায় বিহারে খেলা শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয় এনডিএ।
আরও পড়ুন: ডিএনএ ভুলে এনডিএ-তে
মহাজোটের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দিয়ে আজ শপথ নিলেন পুরনো জুটি। মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও উপমুখ্যমন্ত্রী বিজেপির সুশীল মোদী। শপথের পর প্রথামাফিক রাজ্যপালের চা-চক্র শেষে বেলা ১১টা নাগাদ রাজভবন থেকে বেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-নিবাসে যান তাঁরা। সেখানে দু’জনে কিছুক্ষণ কথা বলেন। নয়া মন্ত্রিসভায় কোন দলের কত জন এবং কারা কারা থাকবেন, তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে মন্ত্রিসভা তৈরির আগে আগামী কালই বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষা সেরে নিতে চাইছেন নীতীশ। তার পরেই মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের বিষয়ে তাঁরা ভাববেন বলে মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয় সূত্রের খবর। যদিও জেডিইউ এবং বিজেপি নেতাদের দাবি, আস্থাভোটে নীতীশের জয়ী হওয়াটা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার পর মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সেটাই হবে বিহার এনডিএ-র ‘গ্ল্যামার শো’।
নীতীশের পুরনো সঙ্গী বিজেপি। টানা ৯ বছর এনডিএ জোটে ছিল জেডিইউ। বছর চারেক আগে বিজেপি-তে নরেন্দ্র মোদীর উত্থানের জেরে সেই বন্ধুত্বে ছেদ পড়ে। দুই নেতার মধ্যে তিক্ততাও তৈরি হয় বিস্তর। আজ সে সব ভুলে সুশীল মোদীকে পাশে নিয়ে ফের শুরু নীতীশের পথ চলা। শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘‘নীতীশের ‘স্বাভাবিক মিত্র’ তো বিজেপি-ই। নীতীশ সেই অর্থে কখনও কংগ্রেসের সঙ্গে ঘর করেননি, আরজেডি তো দূরের কথা।’’
কথাটা যে একেবারে ফেলনা নয়, তা স্পষ্ট শপথ মঞ্চে বসা নীতীশের শরীরী ভাষায়। স্বস্তি ছড়িয়ে ছিল উপস্থিত বিজেপি নেতাদের চোখেমুখেও। কারণ ২০১৪-র লোকসভা ভোটের জয়জয়কারের এক বছরের মধ্যেই নীতীশ-লালু জোটের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে মোদী-শাহের বিজয়রথ। গো-বলয়ে বিহার ছিল বিজেপি নেতৃত্বের ‘মাথার কাঁটা’। বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিহারের মহাজোট। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে যদি এই জোট বহাল থাকে তবে বিহারে ২০১৪-র পুনরাবৃত্তি সম্ভব হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন তাঁরা। আর তা হলে লোকসভায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি ফের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা, তা নিয়েও সংশয় ছিল।
সুতরাং এক ঢিলে দুই পাখি মারল বিজেপি। মহাজোট ভেঙে এক দিকে তারা যেমন বিহার দখল করল, তেমনই জাতীয় স্তরে বিরোধী-ঐক্যও কার্যত অঙ্কুরেই তছনছ করে দিল। নীতীশকে সঙ্গে পাওয়ায় ২০১৯-এর বিহার জয় অনেক মসৃণ হবে বলেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের আশা।
কিন্তু তার পর? কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে নীতীশ-বিজেপি সম্পর্ক? দিল্লিতে এক বিজেপি নেতার তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত, ‘‘এক সময় মহারাষ্ট্রে আমরা ছোট শরিক ছিলাম। দাদা ছিল শিবসেনা। এখন সেখানে আমরাই দাদা।’’