তৈরি হচ্ছে দেশের ৭৬০টি জেলা হাসপাতালের তালিকা। যাদের কাজ খারাপ, তাদের নাম প্রকাশ করে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখে ফেলা হবে বলে জানাল নীতি আয়োগ। ‘নেমিং ও শেমিং’ নীতি মেনে আর্থিক সাহায্যও কমানো হবে সে সব হাসপাতালের।
দেশে স্বাস্থ্য পরিষেবা কোথায় দাঁড়িয়ে, সেই ছবিটি আজ প্রকাশ করেছে নীতি আয়োগ। ‘হেলদি স্টেট প্রগেসিভ ইন্ডিয়া’ (২০১৫-১৬)-নামে ওই রিপোর্ট তৈরিতে সহযোগিতা করেছে বিশ্বব্যাঙ্ক। রাজ্যগুলির মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে কেরল। তার পরে পঞ্জাব, তামিলনাড়ু। দশম স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। একেবারে নীচে বিহার, রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য। গত এক বছরে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতিতে সবচেয়ে ভাল ফল করেছে ঝাড়খণ্ড।
দশ নম্বরে থাকা বাংলার সূচক আগের বছরের তুলনায় ০.৩৮ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এটুকু বৃদ্ধিকে আদৌও সন্তোষজনক মনে করছে না আয়োগ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সদ্যোজাতদের মৃত্যুর প্রশ্নে গোটা দেশে চতুর্থ স্থানে পশ্চিমবঙ্গ। কেরলে প্রতি প্রতি হাজার জনে যেখানে ৬ জন শিশু মারা যায়। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যাটা ১৮। তবে পাঁচ বছরের নীচের শিশুমৃত্যুর প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গের স্থান ষষ্ঠ। এক নম্বরে থাকা কেরলে ১৩ জনের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যা হল ৩০। জন্মের সময়ে কম ওজন থাকার প্রশ্নে এক নম্বরে রয়েছে তেলঙ্গানা, সেখানে যখন মাত্র ৬% শিশু ওই সমস্যায় ভোগে। পশ্চিমবঙ্গে এর শিকার হল ১৬.৫% সদ্যোজাত। শিশু-টিকাকরণে পশ্চিমবঙ্গ দেশের বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পঞ্চম হলেও, হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রসবের ক্ষেত্রে রাজ্য আট নম্বরে। এক নম্বরে গুজরাত। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা জেলা হাসপাতালগুলিতে নার্স নিয়োগের প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গ চতুর্থ স্থানে থাকলেও, গ্রামীণ এলাকায় চিকিৎক নিয়োগের ব্যাপারে একেবারে শেষের দিকে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে শীর্ষ পদে দীর্ঘ সময় ধরে একই আমলাকে রাখার প্রশ্নে সব থেকে উপরে বাংলা। নীতি আয়োগও মনে করছে, সুচারু ভাবে কোনও প্রকল্পের রূপায়ণের জন্য আমলাদের একই পদে দীর্ঘ দিন ধরে রাখা উচিত।
কেন এই রিপোর্ট? কেনই বা হাসপাতালগুলির তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে? নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের যুক্তি, ‘‘এতে রাজ্যগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়বে। আখেরে দেশের স্বাস্থ্য চিত্রের উন্নতি হবে।’’ বিশ্বব্যাঙ্কের অধিকর্তা জুনেদ আইমাদের কথায়, ‘‘ভাল স্থান পাওয়ার অর্থ হল রাজ্য ও হাসপাতালগুলির জন্য বেশি আর্থিক সহায়তা।’’ নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ পলের মতে, ‘‘এটি একটি পরীক্ষার মতো। হাসপাতালের দুর্বলতাগুলিকে খুঁজে পেলে আগামী দিনে সঠিক রাস্তায় হাঁটা সম্ভব হবে।’’