নির্ভয়া কাণ্ডে চার দণ্ডিত। —ফাইল চিত্র
নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিতের কাল ফাঁসি হবে কি? এই প্রশ্ন ঘিরে চরম দোলাচল আইনজীবী মহলে। আপাতত ফাঁসি কার্যকরের উপর স্থগিতাদেশের রায় নির্ধারিত করে রেখেছে দিল্লির পটিয়ালা হাউস কোর্ট। ফাঁসির দিনক্ষণ আর পিছনো সম্ভব নয় বলে প্রথমে জানিয়েছিল আদালত। তবে পরে পবনের আইনীজীবীরা জানান, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানিয়েছে তাদের মক্কেল। তার পর ফের সেই মামলা শুনতে রাজি হন পটিয়ালা হাউস কোর্টের বিচারক।
সুপ্রিম কোর্টে রায় সংশোধনের আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) জানিয়েছিল পবন গুপ্ত। কিন্তু সেই আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। তার পরেই প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় পবন।
অন্য দিকে সোমবার অক্ষয় ঠাকুর, পবন গুপ্ত এবং মুকেশ সিংহের আইনজীবীরা ফাঁসির দিন ক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার আর্জি জানান। আজ সোমবার প্রথম পর্বের শুনানির পর ফাঁসি পিছতে নারাজ বলে জানান বিচারক। তখন পবনের আইনজীবী বলেন, তার মক্কেলের প্রাণভিক্ষার আর্জি এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে বিচারাধীন রয়েছে। তার পর দ্বিতীয় দফায় ফের শুনানি হয়। সেই শুনানি শেষে রায় নির্ধারিত করেছেন বিচারক। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাননি তিনি।
ইতিমধ্যেই তিন বার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে পটিয়ালা হাউস কোর্ট। প্রথম দু’বার আইনি জটিলতায় সেই পরোয়ানা কার্যকর হয়নি। তৃতীয় তথা শেষ জারি করা পরোয়ানা অনুযায়ী আগামিকাল মঙ্গলবার সকাল ছ’টায় তিহাড় জেলে ফাঁসি হওয়ার কথা চার জনের।
আরও পড়ুন: পরীক্ষা শেষে ‘ফুর্তি’! গণধর্ষণের পর কিশোরীকে খুন করে গাছে ঝোলানো হল
কিন্তু নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিতের ফাঁসি আগামিকাল মঙ্গলবার হচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ আইন অনুযায়ী, প্রাণদণ্ডে দণ্ডিতদের সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ হওয়ার পরেও ১৪ দিন সময় দিতে হয় প্রস্তুতির জন্য। এই সময়ের মধ্যে দণ্ডিতদের মানসিক ভাবে তৈরি করা, পরিবারের লোকজনকে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া বোঝানো-সহ যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ সারেন জেল কর্তৃপক্ষ। এ ক্ষেত্রে সেই ১৪ দিনের সময়সীমার প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার রাষ্ট্রপতির প্রাণভিক্ষার আর্জি চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার বিকল্পও পবনের হাতে রয়েছে বলে আইনজ্ঞ মহলের একাংশের মত। ফলে সব মিলিয়ে তীব্র দোলাচলে ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া।
ফাঁসি থেকে বাঁচতে নির্ভয়া কাণ্ডের চার দণ্ডিতের মধ্যে তিন জনের সমস্ত আইনি বিকল্প শেষ। একমাত্র বাকি পবন গুপ্ত। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শীর্ষ আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি (কিউরেটিভ পিটিশন) জানায় পবন। তার দাবি ছিল, ২০১২ সালে অপরাধের সময় তার বয়স ছিল ১৬ বছর দু’মাস। কিন্তু, তার সেই আর্জি নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট— কেউই শোনেনি। পবনের দাবি খারিজ করে সোমবারই রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তার পরেই রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আর্জি জানায় পবন।
আরও পড়ুন: ‘পরিকল্পিত গণহত্যা হয়েছে দিল্লিতে’, নেতাজি ইন্ডোরের মমতা
২০১২ সালে রাজধানীর বুকে চলন্ত বাসে ২৩ বছরের নির্ভয়াকে ধর্ষণ ও খুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় নিম্ন আদালত। তার পর থেকে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট হয়ে চলছে দীর্ঘ আইনি লড়াই।