সাড়ে চারটে বছর বদলে দিয়েছে তাঁদের জীবনটাকে।
টিভি ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বাল্বের আলো এখন চোখে সয়ে গিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে মেয়ের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠলেও, দিব্যি সামলে নিতে পারেন এখন। গুছিয়ে জবাবও দিতে পারেন। তাঁদের সঙ্গে কেউ নিজস্বী তোলার আবদার করলে, সেটাও রাখেন।
নির্ভয়ার বাবা-মা বদ্রীনাথ সিংহ ও আশা দেবীর জীবনে যেটা বদলায়নি— তা হল লড়াই। প্রথমে নিম্ন আদালতে এক বছর, তার পর দিল্লি হাইকোর্টে বছর খানেক, শেষে সুপ্রিম কোর্টেও গত এক বছর ধরে চুলচেরা আইনি বিশ্লেষণ চলেছে— নির্ভয়া কাণ্ডে দোষীদের ফাঁসির সাজা হবে, কি হবে না। শুনানির দিন পড়লেই দক্ষিণ দিল্লির দ্বারকা থেকে সকালেই সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছে যেতেন তাঁরা। শুনানি শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠায় বসে থাকতেন এজলাসে।
শুক্রবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুপুর দু’টোয় দু’নম্বর এজলাসে রায় ঘোষণার ঘণ্টা খানেক আগেই এজলাসের থামের সামনে বসে পড়েন বদ্রীনাথ-আশা। বারবার ঘড়ি দেখছিলেন বদ্রীনাথ।
আরও পড়ুন:ওদের ছেড়ো না, বলেছিলেন নির্ভয়া
দুপুর দু’টোয় রায় ঘোষণা শুরু হল। মিনিট কুড়ি পরে প্রথম ইঙ্গিত মিলল, হাইকোর্টের ফাঁসির সাজাই বহাল রাখতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। করতালিতে ফেটে পড়ল এজলাস। বিচারপতি দীপক মিশ্র ইশারায় উল্লাস থামালেন। কিন্তু মায়ের চোখের জল বাঁধ মানল না।
এজলাস থেকে বেরিয়ে আশা দেবী বললেন, ‘‘দেরি হলেও বিচার পেলাম। মেয়েটার আত্মা শান্তি পাবে!’’ বদ্রীনাথ বললেন, ‘‘এই রায়ের পর অপরাধীরা ভয় পাবে। আর কারও আমার মেয়ের দশা হবে না, এইটুকুই আশা করতে পারি।’’ আদালতের নিরাপত্তাকর্মী, বার অ্যাসোসিয়েশনের কাফেটেরিয়ার কর্মী থেকে নবীন-প্রবীন আইনজীবীরা তাঁদের চিনে ফেলেছেন। রায়ের পরে কেউ কেক খাইয়ে গেলেন। কেউ হাতে তুলে দিলেন ডাবের জল।
এক জনেরই শুধু দেখা মিলল না। নির্ভয়ার সেই বন্ধু। যাঁর সঙ্গে ২০১২-র ১৬ ডিসেম্বর রাতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী। দুষ্কৃতীরা বাসের মধ্যে অত্যাচারের পর, তাঁদের রাস্তায় ফেলে চাকায় পিষে মারতে চেয়েছিল। ওই বন্ধুই শেষ মুহূর্তে এক টানে সরিয়ে নেন নির্ভয়াকে। এক জন বললেন, ‘‘ও আর কোনও যোগাযোগ রাখে না। পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছে নিজেকে।’’