প্রতীকী ছবি।
জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর জন্য তহবিল সংগ্রহের অভিযোগে দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির এক ছাত্রকে গতকাল গ্রেফতার করেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। যদিও ধৃতের পরিজন সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে।
আজ এনআইএ জানিয়েছে, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মহসিন আহমেদ (২২) আইএসের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতেন। বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করা সেই অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে সিরিয়ায় পাঠাতেন। মহসিন জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। তিনি দিল্লির বাটলা হাউস অঞ্চলের একটি বাড়িতে থাকতেন। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মহসিনের ঘরে তল্লাশি চালানো হয় বলেও জানিয়েছে এনআইএ। যদিও মহসিনের পরিবারের দাবি, সমস্ত অভিযোগই অসত্য। তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। মহসিনের বাবা রেলে কর্মরত। তিন বোনও রয়েছেন। আজ সকালেই পটনা থেকে দিল্লি এসেছেন তাঁরা।
এক বোন জানিয়েছেন, মহসিন যদি সত্যিই জঙ্গি সংগঠনের জন্য তহবিল সংগ্রহে যুক্ত থাকতেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর কাছেই বিপুল অর্থ থাকার কথা। অথচ এক দিন আগেও তাঁর কাছে চার হাজার টাকা চেয়েছিলেন মহসিন, দাবি বোনের। তাঁর কথায়, ‘‘ও (মহসিন) সকলকে সাহায্য করত। সামাজিক কাজে যুক্ত ছিল। লকডাউনের সময়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে অনুদান সংগ্রহ করে গরিবদের মধ্যে খাদ্যশস্যও বিতরণ করেছে।’’ এর পরেই এনআইএ-র অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সম্পূর্ণ ভুয়ো অভিযোগ। এ জন্য তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানান। মহসিনের বোনের দাবি, তাঁর ভাই বুঝতেই পারছেন না, ঠিক কী কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহসিনকে নিরপরাধ বলেই মনে করেন তিনি। এমনকি যে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকা ও তাদের হয়ে তহবিল সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে, সেই আইএসের নামও ভাই শুনেছেন কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে বোনের।
মহসিনের মা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে দিল্লির বাটলা হাউস অঞ্চলে বন্ধু ও তুতো ভাইদের সঙ্গে থাকছিলেন মহসিন। প্রসঙ্গত গত ২৫ জুন আইএসের কার্যকলাপ বৃদ্ধি সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করে এনআইএ। গত ৩১ জুলাই এই মামলার সূত্রে ছ’টি রাজ্যের ১৩টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। তার মধ্যে রয়েছে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও রাইসেন, গুজরাতের ভারুচ-সুরাত-নভসারী-আমদাবাদ, বিহারের আরারিয়া, কর্নাটকের ভাটকল-টুমকুর, মহারাষ্ট্রের কোলহাপুর-নান্দেড় এবং উত্তরপ্রদেশের দেওবন্দ।
তদন্তের সূত্রে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর এনআইএ-র নজরে আসে যে, অনলাইনে ভুয়ো প্রচারের মাধ্যমে ভারতে ক্রমশ নিজেদের সংগঠন বিস্তারের চেষ্টা করছে এনআইএ। এ ক্ষেত্রে সমাজমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মকে (ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম) ব্যবহার করে যুব সমাজের একাংশকে নিজেদের সংগঠন বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে আইএস। আইইডি-র মতো বিস্ফোরক তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে ওই জঙ্গি সংগঠনটি। যাতে নাশকতামূলক কার্যকলাপ করা যায়। এর পরেই এনআইএ-র তরফে নাগরিকদের কাছে আবেদন করা হয়, ইন্টারনেটে সন্দেহজনক কোনও বিষয় নজরে এলে তা যেন এনআইএ-কে জানানো হয়। দেশে আইএসের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে নাশকতা, ষড়যন্ত্র এবং তহবিল সংগ্রহের অভিযোগে ৩৮টি মামলায় ১৭৫ জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। এর মধ্যে ৩১টি মামলায় চার্জশিটও পেশ করা হয়েছে।