nমগ্ন: গঙ্গায় সূর্যাস্ত। মঙ্গলবার হৃষীকেশে। এএফপি
গঙ্গা নিয়ে রাজনীতির প্রচার চলছে রোজই। নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে সরব তাঁর মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যরা। বছর বছর ধরে গঙ্গা সাফাইয়ে তাদের অবদানের কথা বলে চলেছে বিজেপিও। কিন্তু এ সবের মধ্যেই ‘তথ্যের অধিকার আইন’ সামনে নিয়ে এল অন্য এক সত্যিকে। তা হল, গঙ্গা দূষণ দূর করতে দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ‘ন্যাশনাল গঙ্গা কাউন্সিল’ (এনজিসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে একবারের জন্যও বৈঠকে বসেনি। ফলে গঙ্গাকে বাঁচাতে মোদী সরকারের সদিচ্ছা কত টুকু, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা।
২০১৬-র অক্টোবরে গঠিত হয়েছিল এনজিসি। উদ্দেশ্য, গঙ্গাকে ঠিক ভাবে বাঁচিয়ে রাখা। সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বছরে কমপক্ষে একবার এই কমিটির বৈঠক করার কথা। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এই কমিটিতে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীরা রয়েছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী, পরিবেশমন্ত্রীও এই কমিটির সদস্য।
উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই কমিটি গড়া হয়েছিল ইউপিএ জমানার ‘ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি’-র অবলুপ্তির মধ্য দিয়ে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন কমিটি ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে তিন বার বৈঠকে বসেছিল। ২০১৪ সালে মোদী সরকার গঠনের পরে সেই কমিটির দু’টি বৈঠক হয়। ২০১৫-র মার্চের বৈঠকটিতে হাজির ছিলেন মোদীও। তার পরে ২০১৬-য় এনজিসি গড়ে ওঠে। পুরনো কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তথ্যের অধিকার আইনে এক প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন ‘ন্যাশনাল ক্লিন গঙ্গা মিশন’ জানিয়েছে, গঠনের পরে দু’বছরের বেশি সময় কেটে গেলও মোদীর নেতৃত্বাধীন এনজিসি গঙ্গার সমস্যা কাটাতে কোনও আলোচনাতেই বসেনি।
২০১৭-র ডিসেম্বরের সিএজি রিপোর্টে গঙ্গা দূষণ কমাতে সরকারের কাজের প্রগতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। পাশাপাশি, মুরলীমনোহর জোশীর নেতৃত্বাধীন সংসদের এস্টিমেট কমিটিও গঙ্গা সাফ করতে সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছিল। এর পরেও অবশ্য হেলদোল নেই সরকারের। সংসদীয় কমিটির রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে রোজ ৭৩০১ মিলিয়ন লিটার বর্জ্য তৈরি হয়। কিন্তু এর মধ্যে ২১২৬ মিলিয়ন লিটার পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই জটিল পরিস্থিতিতেও এনজিসির বৈঠক না বসায় ক্ষুব্ধ পরিবেশবিদরা। মোদীকে নিশানা করে সমাজকর্মী রাজেন্দ্র সিংহের মন্তব্য, ‘‘গঙ্গার হৃৎপিন্ডের সমস্যা। কিন্তু এর চিকিৎসা করছেন এক জন দন্ত চিকিৎসক।’’ মোদী সরকারের অবশ্য বক্তব্য, ২০১৫ সালের মে মাসে ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পকে সামনে রেখে কাজ করে চলেছে সরকার। এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের ২৫৪টি কাজের মধ্যে ৩১টি সম্পূর্ণ হয়েছে। সম্প্রতি সোলের শান্তি পুরস্কারের সব টাকা এই প্রকল্পেই দিয়েছেন মোদী।