নতুন দল গড়ছেন, যোগ দিচ্ছেন রাজনীতিতে, ঘোষণার পরে রজনীকান্ত। ছবি: এএফপি।
রাম-রাবণের যুদ্ধ চলছে। হঠাৎ রামের পিছনে একজনকে দেখে রাবণ ধনুর্বাণ ফেলে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সরে দাঁড়ালেন। রাম জিজ্ঞাসা করলেন— কী হয়েছে? রাবণ বললেন— থাক, আর যুদ্ধ করে কাজ নেই। রাম অবাক হয়ে বললেন— কী হয়েছে বলতে হবে তো! যুদ্ধ ছেড়ে এমন মাঝপথে চলে যাওয়া যায় নাকি! রাবণ বললেন— এই সামান্য ঝামেলার জন্য আপনি রজনীকান্তকে ডেকে এনেছেন! এর পরেও বলছেন যুদ্ধ করতে!
অথবা, রজনীকান্ত এক ব্যক্তির উপর খুব রেগে গিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘নরকে যাও।’’ সেই ব্যক্তিই এখন যমরাজ নামে পরিচিত।
অথবা, এক ছোট্ট শিশুকে রজনীকান্ত একবার একটা চুটকি শুনিয়েছিলেন। সেই শিশুকে এখন সবাই লাফিং বুড্ঢা নামে চেনেন।
আরও পড়ুন: সঙ্কট কাটল শাহের আশ্বাসে, দায়িত্ব নিলেন নিতিন পটেল
রজনীকান্তকে ঘিরে বাজারচলতি গল্পগাছার বহরটা এই রকমই। কিংবদন্তী, রূপকথা, মহাকাব্য— সব কিছু যেন মিলে-মিশে একাকার হয়ে গিয়েছে দক্ষিণী সুপারস্টারের দরবারে। সেই রজনীকান্ত রাজনীতিতে পা রাখার কথা ঘোষণা করলে, পরিস্থিতি ঠিক যে রকম হতে পারে, তেমনই হল। টুইটার, ফেসবুক, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ জুড়ে রজনীর বান ডাকল রবিবার।
দক্ষিণ ভারতের পরিচিত প্রবণতা অনুসরণ করে রজনীকান্ত রাজনীতির ময়দানে পা রাখুন, এমনটা অনুগামী এবং ভক্তরা দীর্ঘ দিন ধরেই চাইছিলেন। রাজনীতিতে যে তিনি পা রাখবেন, সে ইঙ্গিত ‘থালাইভা’ নিজেও দিতে শুরু করেছিলেন সম্প্রতি। কয়েক দিন আগে জানিয়েছিলেন, ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণা করবেন নিজের সিদ্ধান্ত। যে মুহূর্তে রজনীকান্ত জানালেন, তিনি রাজনৈতিক দল গড়ছেন, সেই মুহূর্ত থেকে ঠিক কী ধরনের উন্মাদনা তৈরি হতে পারে তাঁর ভক্তকুলে, তা আঁচ করতে কারওরই অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবু যদি বোঝা না যায় যে, রজনীকান্তের ঘোষণাকে ঘিরে কী রকম উন্মাদনা তৈরি হয়েছে তামিলনাড়ুতে, তা হলে সামান্য একটু চোখ রাখতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ায়। রবিবার দুপুর থেকে টুইটার ভেসে যাচ্ছে রজনী-আবেগে।
শুধু সোশ্যাল মিডিয়া নয়, চেন্নাইয়ের পথঘাটও রবিবার রজনীকে ঘিরে প্রবল জনাবেগের সাক্ষী হল। ছবি: এএফপি।
রাজনীতির ময়দানে পা রেখে এক ধাক্কায় পরিস্থিতিটা পুরো উল্টে দিয়েছেন রজনীকান্ত। দাবি এক ভক্তের। রজনীকান্ত রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন বলে মনে করছেন না রবি পি দোশী নামে সেই রজনী-ভক্ত। তাঁর টুইট, ‘‘অবশেষে রাজনীতি যোগ দিল রজনীকান্তে।’’
পরবর্তী নির্বাচনে তামিলনাড়ুর সব আসনে লড়বে তাঁর দল, ঘোষণা করেছেন রজনী। অতএব, অংশুল সাক্সেনা নামে আর এক রজনী-ভক্তের টুইট, ‘‘...যখন রজনীকান্ত নির্বাচন লড়েন, তখন নির্বাচন হেরে যায়।’’
রাজনীতিতে তিনি যোগ দিচ্ছেন এবং নিজের দল গড়ে রাজনীতিতে আসছেন, এ কথা রজনীকান্ত ঘোষণা করার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় রজনীকে নিয়ে একের পর এক হ্যাশটাগ ট্রেন্ড করতে শুরু করে রবিবার। #রজনীকান্তপলিটিক্যালএন্ট্রি, #সুপারস্টাররজনীকান্ত, #থালাইভার— গোটা ভারতে এই তিনটি হ্যাশটাগ ট্রেন্ডিং হয়ে যায়। এক সময় ট্রেন্ডিং লিস্টের শীর্ষে পৌঁছে প্রথম তিনটে স্থান দখল করে নেয় এই সব রজনী হ্যাশট্যাগস। সেই ট্রেন্ডিং লিস্টও টুইটারে তুলে ধরেন কেউ কেউ। বোঝানোর চেষ্টা করেন, রজনীকান্ত ঠিক কতটা জনপ্রিয়।
আরও পড়ুন: সঙ্কট কাটল শাহের আশ্বাসে, দায়িত্ব নিলেন নিতিন পটেল
বেলা একটু গড়াতেই টুইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের ধরন বদলাতে শুরু করে। গোড়ায় ছিল শুধু উল্লাস। পরে শুরু হয় একের পর এক ভবিষ্যদ্বাণী। রজনীকান্তই যে তামিলনাড়ুর পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী, সে বিষয়ে যেন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন রজনী-ভক্তেরা।
আরও পড়ুন: রজনীর আগে রাজনীতিতে এসেছেন যে দক্ষিণী তারকারা
জয়ললিতা যে পোয়েস গার্ডেনে থাকতেন, রজনীকান্তও সেই এলাকারই বাসিন্দা। তাই এক ব্যক্তির টুইট, ‘‘আবার পোয়েস গার্ডেনই রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্র হতে চলেছে।’’
কুণাল মেহতার টুইট, ‘‘থালাইভা আলা রে আলা... আপনি কুর্সি সম্ভাল বাকি পলিটিক্সওয়ালা।’’
আর পরিনজু ভেলিয়াথ নামে এক রজনী-ভক্তের রজনী স্টাইল টুইট, ‘‘সময় নষ্ট করছেন কেন, থালাইভাকে শপথ নিতে দিন...।’’