পুরসভার অনাস্থা ভোটের ফলকে ঘিরে বিজেপির জেলা সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নতুন মোড় নিল। বর্তমান সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যকে সরানোর দাবি আরও জোরদার হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও কংগ্রেসের কাছে হারের পর গুয়াহাটিতে বিশ্বরূপবাবুর বিরুদ্ধে সওয়াল করতে হাজির হয়েছে বিরুদ্ধ-গোষ্ঠী।
এতদিন জেলা সভাপতি নিজেকে স্বপদে বহাল রাখতে ঘনিষ্ঠদের নিয়ে প্রদেশ বিজেপি নেতৃত্বের কাছে সওয়াল করছিলেন। যদিও সভাপতি নির্বাচনের মতামত সংগ্রহ প্রক্রিয়ায় হেরে যান বিশ্বরূপবাবু। তাঁর বিরোধী, সুধাংশুশেখর দাস বিভিন্ন মণ্ডল সভাপতির সমর্থন আদায় করেছেন। জেলা সভাপতি ‘নির্বাচন’ ঘিরে এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মধ্যেই করিমগঞ্জ পুরসভার অনাস্থা ভোট গ্রহণ হয়। বিজেপির ১৫ জন পুরসদস্য থাকার পরও ১২টির বেশি ভোট অনাস্থার পক্ষে যায়নি। পুরসভার ভোটে ক্রসভোটিং হয়েছে।
এর জন্য জেলা সভাপতি বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য এবং করিমগঞ্জ বিজেপির নেতা তথা প্রদেশ বিজেপির সহ-সভাপতি মিশন রঞ্জন দাসের সংঘাতকেই দায়ী করছেন দলের অনেকে। বিজেপির একাংশের অভিযোগ, জেলা বিজেপিতে সঠিক নেতৃত্ব না থাকায় পুরসভার অনাস্থায় জয়লাভ করতে পারেনি দল। তাই পরবর্তী ক্ষেত্রে বিশ্বরূপ ভট্টাচার্যকে পুনরায় ‘চাপিয়ে’ দেওয়ার চেষ্টা না করতে প্রদেশ নেতৃত্বকে অনুরোধ করেছেন করিমগঞ্জের বিজেপি সদস্যদের একাংশ।
বিরোধী শিবিরের আপত্তি মেনে শেষ পর্যন্ত যদি বিশ্বরূপবাবুকে সভাপতি না করা হয় তবে সেই জায়গায় কৃষ্ণ দাস অথবা জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সুব্রত ভট্টাচার্যকে সভাপতির আসনে বসানোর আর্জি জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে বর্তমান সভাপতির শিবির। তবে বিরোধী শিবিরের দাবি, করিমগঞ্জের আবর্ত ভবনে বিভিন্ন মণ্ডল সভাপতির মতামত সংগ্রহ করা হয়েছিল। প্রায় সকল সদস্যই লিখিতভাবে প্রদেশ নেতৃত্বের কাছে মতামত জাহির করেছিলেন। তাই তারা সুধাংশুশেখর দাসের ছাড়া অন্য কোন নামে রাজি নন। তাদের অভিমত, পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে দেওয়া অনেকটা ভোট দেওয়ার মতোই। যেহেতু ভোটে জয়লাভ করেছেন সুধাংশুবাবু, তাই তাকেই সভাপতি করতে হবে।
এ দিকে, পুরসভায় বিজেপির হার এবং কংগ্রেসের জয় নিয়ে আজও শহর জুড়ে চলছে জোর আলোচনা। এরই মধ্যে কংগ্রেসের তরফ থেকে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির পরাজয়ের বিরুদ্ধে সরব হন কংগ্রেস নেতারা। কংগ্রেস নেতা সতু রায় বলেন, ‘‘অন্যের ঘরে আগুন দিলে, নিজের ঘরও যে পুড়তে পারে এটা বিজেপির বোঝা উচিত ছিল।’’ তিনি বলেন, করিমগঞ্জ পুরসভা ভালে ভাবেই চলছিল। কিন্তু তারপরও বিজেপি নেতৃত্ব পুরবোর্ড ভেঙ্গে ফেলার চক্রান্ত করেন। কংগ্রেসের মনোনয়নে জয়লাভ করা ৫ সদস্যকে বিভিন্ন পদের টোপ দিয়ে বিজেপিতে যোগদান করানো হয়। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়া ৫ কংগ্রেস সদস্য এবং বিজেপি পুরসদস্যদের কয়েকজন মিলিত ভাবে বিজেপির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
সাংবাদিক বৈঠকে উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ বলেন, অসমে বিজেপি কোনদিনই শাসন ক্ষমতায় আসেনি। তাই রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে যা খুশি তা করতে চাইছে। বিধায়কের অভিযোগ, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত পুরবোর্ড অহেতুক ভেঙ্গে ফেলতে চেয়েছিল বিজেপি। বিজেপিরই একাংশ সেই চক্রান্ত বানচাল করে দিয়েছেন।