লিসু রেন ব্যাবলার। নিজস্ব চিত্র।
কথায় বলে চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন। চোখ যখন বিভ্রান্ত করছিল, তখনই পাখির গান কান পেতে শুনেই সেই বিবাদ ভঞ্জন হল। ভারত তথা বিশ্বের পাখি প্রজাতিতে যোগ হল একটি নতুন নাম, লিসু রেন ব্যাবলার।
দক্ষিণ ভারতের পাখিপ্রেমীরা অরুণাচলের চাংলাং জেলায় মুগাফি শৃঙ্গে অভিযান চালিয়ে নতুন প্রজাতির রেন ব্যাবলারের সন্ধান পেলেন। স্থানীয় জনজাতির নামে তাঁরা ওই পাখির নাম দিয়েছেন লিসু রেন ব্যাবলার। বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও তিরুঅনন্তপুরমের ছয় পাখিপ্রেমী এ বছর মার্চে ধূসর পেটের বিরল প্রজাতির ব্যাবলারের সন্ধানে মুগাফি শৃঙ্গে ওই অভিযান চালান।
মূলত মায়ানমার ও সংলগ্ন চিন এবং তাইল্যান্ডে দেখা মেলা বিরল ওই পাখি ভারতে এক বারই দেখা গিয়েছিল। মুগাফি শৃঙ্গে, ১৯৮৮ সালে। সে বার ওই পাহাড়ে এমন দু’টি পাখির দেখা পেয়েছিলেন অভিযানকারীরা। তারই একটি পাখিকে এখন সংরক্ষিত রাখা আছে আমেরিকার স্মিথসোনিয়ান সংগ্রহশালায়। কিন্তু এ বারের অভিযানে, গ্রে বেলিড ব্যাবলারের বদলে তাঁরা দেখা পেলেন নতুন এই প্রজাতির। এই আবিষ্কারের কথা ইন্ডিয়ান বার্ডস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযানকারী দলের সদস্য প্রবীন জয়াদেবন জানান, তাঁরা বিজয়নগর থেকে দু’দিন পাহাড়ে চড়ার পরে যে পাখিগুলির দেখা পান, সেগুলিরও পেটের অংশ ধূসর ছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন গ্রে বেলিড রেন ব্যাবলারই দেখেছেন। কিন্তু ধন্দ দেখা যায় পাখির ডাক নিয়ে। কারণ গ্রে বেলিড রেন ব্যাবলারদের কম্পমান ধ্বনিবিশিষ্ট ডাকের বদলে মুগাফিতে দেখা মেলা পাখিদের ডাক ছিল অনেকটাই নাগা ব্যাবলারের মতো মিষ্টি।
ফিরে এসে তাঁরা গ্রে বেলিড রেন ব্যাবলারদের সম্পর্কে সব তথ্য সংগ্রহ করেন। দেখা যায় তাদের কারও ডাকের সঙ্গেই মুগাফির ব্যাবলারদের ডাক মিলছে না। এমনকি গ্রে বেলিড ব্যাবলারদের আগের ছবি ও স্মিথসোনিয়ান সংগ্রহশালার ব্যাবলারের ছবিতেও দেখা যায় নামে গ্রে বেলিড হলেও তাদের পেটের অংশ সাদাটে। তুলনায় মুগাফিতে দেখা মেলা ব্যাবলারের পেটে রং অনেক বেশি ধূসর। বোঝা যায় তাঁরা যে ব্যাবলারটির দেখা পেয়েছেন সেটি আরও এক নতুন প্রজাতি। নামদাফা জাতীয় উদ্যানে পাখি দেখার অভিযানের ব্যবস্থাপক ইয়োলিসা ইয়োবিনের মতে, লিসু রেন ব্যাবলার সম্ভবত আশপাশের পাহাড়ে আরও রয়েছে। ওই পাখি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।