ন্যানো-নমুনা। ছবির সৌজন্যে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, তামিলনাড়ু।
কার্বনের পরমাণুগুলিকে একটিমাত্র স্তরে কতগুলি ষড়ভুজের মতো করে সাজালে মেলে গ্রাফিন। হিরেকে অনেক পিছনে ফেলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্ত বস্তু এটি। কাঠিন্যে এর পরেই আছে কার্বন ন্যানোটিউব‒ সুশৃঙ্খল ভাবে সাজানো কার্বন পরমাণু দিয়ে তৈরি কতগুলি ষড়ভুজের টিউব। ইস্পাতের তুলনায় এর ওজন মাত্র ১০%। এই অতিক্ষুদ্র টিউবগুলির আস্তরণ এতই পাতলা যে ন্যানোমিটারে এর মাপ বলা হয়। সম্প্রতি এমন আস্তরণের হদিস মিলেছে তামিলনাড়ুর কিলাড়িতে, কতগুলি প্রাচীন মাটির পাত্রের গায়ে। পাত্রগুলি তৈরি হয়েছিল ৬০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে।
সম্প্রতি ‘সায়েন্টেফিক রিপোর্টস’ পত্রিকায় এই আবিষ্কারের কথা প্রকাশিত হয়েছে। এর সহলেখক, ভেলোর ইনস্টিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী বিজয়ানন্দ চন্দ্রশেখরন ও অন্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, “অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে তৈরি এমন অতিক্ষুদ্র মাপের সৃষ্টির কথা জানা ছিল এত দিন। কিলাড়ির ওই পাত্রগুলিতেই মিলেছে মানুষের তৈরি প্রাচীনতম ন্যানো-স্ট্রাকচারের নমুনা।”
কার্বন ন্যানোটিউবের আস্তরণ তাপ ও বিদ্যুতের অতি সুপরিবাহী। ইলেকট্রনিক্স, অপটিক্স, প্লাস্টিক থেকে শুরু করে এখন ওষুধ ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও ব্যবহার হচ্ছে এর। এর অতিবিশেষ ধর্মগুলির জন্যই ২৬২০ বছর ধরে পাত্রগুলির ওই আস্তরণ টিকে আছে বলে জানা্চ্ছেন বিজ্ঞানীরা। সে যুগের মানুষ হয়তো পরমাণুর গঠন ও ওই সব ধর্মের কথা এখনকার মতো করে জানতেন না, তবে এর গুণাগুণ সম্পর্কে যে ওয়াকিবহাল ছিলেন, সেটা স্পষ্ট। পাত্রগুলি সম্ভবত সে সময়ের অভিজাতরা ব্যবহার করতেন। আয়ু বাড়াতে বা উজ্জ্বল করে তুলতে পাত্রগুলির গায়ে গাছগাছালির রস মাখিয়ে উচ্চ তাপমাত্রায় পোড়ানো হত। তাতেই পাত্রগুলির গায়ে কার্বন ন্যানোটিউবের এমন আস্তরণ তৈরি হত বলে মনে করা হচ্ছে।
এখন আধুনিক পন্থায় ৬৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দু’ঘণ্টা রেখে দিয়ে কার্বন ন্যানোটিউবের আস্তরণ তৈরি করা যায়। নয়তো সাধারণ ভাবে এর জন্য অন্তত ১১০০ থেকে ১৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার চুল্লি প্রয়োজন। এখন থেকে ২৬২০ বছর আগে দক্ষিণ ভারতের মানুষ কী ভাবে এত উঁচু তাপমাত্রার চুল্লি তৈরি করতেন, সেটাই সবচেয়ে বিস্ময়ের।