Amit Shah

সন্ত্রাস মোকাবিলায় জাতীয় নীতির ঘোষণা শাহের

শাহের বক্তব্য, রাজ্যের তদন্ত করার সাংবিধানিক গণ্ডি থাকে। কিন্তু জঙ্গিদের কোনও গণ্ডি থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্ত্রাসের মূল চক্রী বিদেশের মাটিতে বসে অপারেশনটি চালাচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৭:৪৯
Share:

এনআইএ আয়োজিত দু’দিনের অ্যান্টি-টেরর সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।

সময় পাল্টাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে সন্ত্রাসের চেহারাও। তাই সন্ত্রাসের নতুন পরিভাষার মোকাবিলা করতে ‘জাতীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা নীতি’ তৈরির ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ তিনি জানান, ওই নীতির মূল সুর হবে মূলত সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক সমন্বয়। রাজনীতিকদের মতে, অতীতে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এ ভাবেই সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যা রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ বলে সে সময়ে সরব হয়েছিল বিরোধী রাজ্যগুলি। এ ক্ষেত্রেও বিরোধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরা। আজকের বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন এডিজি স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) বিনীত গোয়েল।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) আয়োজিত দু’দিনের অ্যান্টি-টেরর সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অমিত শাহ। তিনি দাবি করেন, ২০০৬-১৩ পর্বের তুলনায় ২০১৪-২১ পর্বে দেশে সন্ত্রাসের ঘটনা প্রায় ৭০ শতাংশ কমেছে। বাকি যে ত্রিশ
শতাংশ ঘটনা ঘটেছে, তা মূলত সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তাবাহিনীর সংঘর্ষের। যদিও জম্মু ও কাশ্মীরের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক জঙ্গি হামলার ঘটনা নিয়ে মুখ খোলেননি শাহ। আজ তিনি মূলত জোর দিয়েছেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাওয়া সন্ত্রাসের গতিবিধি নিয়ে। তাঁর কথায়, ইন্টারনেট ও ডার্ক ওয়েব ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা যুবকদের মৌলবাদে উৎসাহ দিচ্ছে। ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে জঙ্গিরা অর্থ সংগ্রহ করছে, যা মোকাবিলা করা পুলিশ তথা নিরাপত্তাবাহিনীর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শাহের বক্তব্য, রাজ্যের তদন্ত করার সাংবিধানিক গণ্ডি থাকে। কিন্তু জঙ্গিদের কোনও গণ্ডি থাকে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সন্ত্রাসের মূল চক্রী বিদেশের মাটিতে বসে অপারেশনটি চালাচ্ছে। সূত্রের মতে, সেই গণ্ডিজনিত সীমাবদ্ধতা মুছতেই জাতীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা নীতির পক্ষে আজ সওয়াল করেছেন শাহ। তবে ওই নীতি কার্যকর হলে রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ যে উঠবে, তা বুঝেই শাহ জানিয়েছেন, রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের হাতেই থাকবে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি কেবল পিছন থেকে প্রয়োজনীয় সাহায্য দেবে। সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে কেন্দ্র ও রাজ্য যাতে সুষ্ঠু সমন্বয় রেখে চলে, তার উপরেও জোর দিয়েছেন শাহ। জোর দেওয়া হয়েছে তথ্য বিনিময়ের উপরেও।

Advertisement

ওই নীতির রূপরেখা এখনই স্পষ্ট না করলেও শাহের ইঙ্গিত, আগামী দিনে অ্যান্টি টেররিজ়ম স্কোয়াড (এটিএস), স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) কী ভাবে সন্ত্রাস দমনে কাজ করবে, তার একটি মডেল তৈরি করা হবে। যদি রাজ্যগুলি ওই মডেল মেনে চলতে রাজি থাকে, সে ক্ষেত্রে সন্ত্রাস দমনে রাজ্য ও কেন্দ্রের জন্য একটি সর্বজনীন কাঠামো তৈরি করা হবে। কেন্দ্র জানিয়েছে, ওই কাঠামোর রূপরেখা দ্রুত রাজ্যগুলিকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যাতে রাজ্যগুলি নিজেদের এটিএস ও এসটিএফ-এ প্রয়োজনীয় আধুনিকীকরণ এবং সমন্বয় করে ফেলতে পারে।

ইউপিএ আমলে সন্ত্রাস দমনে রাজ্য ও কেন্দ্রগুলির মধ্যে তথ্যজনিত সমন্বয় সাধনে মাল্টি এজেন্সি সেন্টার (ম্যাক), ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্স গ্রিড (ন্যাটগ্রিড) তৈরি করেছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। ওই উদ্যোগ আইনশৃঙ্খলা প্রশ্নে রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপ বলে সরব হয়েছিল বিরোধী রাজ্যগুলি। এ ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন তুলে
সরব হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা যে রয়েছে, তা ঘরোয়া ভাবে মেনে নিচ্ছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারাই। তৃণমূল নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই নীতি আগে খাতায়-কলমে সামনে আসুক। রাজ্যের অধিকারে যদি কেন্দ্র হস্তক্ষেপ করে, বিরোধিতা করবে তৃণমূল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement