বৈঠকে: নয়াদিল্লিতে অমিত শাহ এবং শরদ পওয়ার। —নিজস্ব চিত্র।
আগামী লোকসভা ভোটে তিনি বিরোধী জোটে ‘পিতামহ ভীষ্ম’-র ভূমিকা নিতে পারেন বলে রাজনৈতিক শিবিরের বড় অংশের ধারণা। সেই শরদ পওয়ার আজ বিরোধী জোটে কার্যত হৃৎকম্প ধরিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন। তা-ও একেবারে রাহুল গাঁধীর আমন্ত্রণে বিরোধী নেতাদের প্রাতরাশ বৈঠক হওয়ার ঠিক পরেই। ওই বৈঠকে পওয়ার না-গেলেও তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলে ছিলেন।
পওয়ার গত মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন। বৈঠকের পরে এনসিপি প্রধান জানিয়েছিলেন, নতুন তৈরি সমবায় মন্ত্রক নিয়ে উদ্বেগ জানাতেই তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন। আজ বিরোধী শিবিরকে পরে কিছুটা স্বস্তি দিয়ে পওয়ার জানিয়েছেন, সমবায় চিনি কারখানা ফেডারেশনের হয়েই তিনি অমিত শাহের কাছে গিয়েছিলেন। কারণ, অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাশাপাশি সমবায় মন্ত্রকেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পওয়ারের সঙ্গে জাতীয় সমবায় চিনি কারখানা ফেডারেশনের চেয়ারম্যান জয়প্রকাশ ডান্ডেগাঁওকর ও মহারাষ্ট্রের এনসিপি সাংসদ সুনীল তাটকারেও ছিলেন। পওয়ারের দাবি, চিনির দাম বাড়ানো, জ্বালানিতে ইথানল মেশানো ও কোঙ্কন এলাকায় দুর্যোগ মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন নিয়ে কথা হয়েছে শাহের সঙ্গে।
গত এক মাসে পওয়ারের সঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের একাধিক বার বৈঠক হয়েছে। তাঁর দিল্লির বাসভবনে যশবন্ত সিন্হার রাষ্ট্র মঞ্চের বৈঠক বসেছে। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত সপ্তাহে দিল্লি সফরে এলেও তাঁর সঙ্গে পওয়ারের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। দু’জনেই দিল্লিতে হাজির থাকলেও তাঁদের শুধুমাত্র ফোনে কথা হয়। এনসিপি, শিবসেনার তরফে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব এসেছে, আগামী বছর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পওয়ারকে বিরোধী জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করা হোক। কিন্তু পওয়ার মাঝেমধ্যেই মোদী-শাহের সঙ্গে বৈঠক করায় নানা জল্পনা চলছে।
এ দিন সকালে রাহুল গাঁধীর ডাকে প্রাতরাশ বৈঠকে শরদ পওয়ার যাননি। তবে তাঁর কন্যা সুপ্রিয়া সুলে বৈঠকে হাজির ছিলেন। মহারাষ্ট্রে শিবসেনা, এনসিপি, কংগ্রেসের জোট সরকার চললেও তাতে বিবাদ লেগেই রয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নানা পাটোলে সম্প্রতি উদ্ধব সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর উপরে নজরদারির অভিযোগ তুলেছেন। এরই মধ্যে পওয়ার-শাহ বৈঠকে মহারাষ্ট্র রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের সম্ভাবনা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়। বিজেপি নেতারা তা উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, প্রকাশ্যে বৈঠক করে এ সব আলোচনা হয় না।
এনসিপি সূত্রের দাবি, মহারাষ্ট্রের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সমবায়ের গুরুত্ব যথেষ্ট। সেই কারণেই কেন্দ্র সমবায় মন্ত্রক তৈরি করে রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত পওয়ার। আজই অবশ্য সমবায় মন্ত্রক সংসদে প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছে, প্রাথমিক কৃষি সমবায় সংস্থার কাজকর্মে কেন্দ্র নাক গলাবে না। সমবায়ের অধীন ব্যাঙ্ক, মেডিক্যাল কলেজও কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে আসবে না। অমিত শাহের দাবি, সহকারিতা মন্ত্রক বা সমবায় মন্ত্রকের কাজ হবে সমবায় ভিত্তিক আর্থিক উন্নয়নের মডেলে উৎসাহ দিয়ে তা তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়া।