—ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেই সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। সে সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ‘পর্যায়ক্রম’ বোঝাতে গিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা ক্রোনোলজি বোঝার চেষ্টা করুন। প্রথমে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ হবে। তার পর দেশ জুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) তৈরির কাজ শুরু হবে।’’ তবে সিএএ হওয়ার দু’বছরের মাথাতেও ওই আইনের ধারা তৈরি করে উঠতে পারেনি কেন্দ্র। আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই আজ লোকসভায় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশ জুড়ে এনআরসি করার কোনও পরিকল্পনাও নেই কেন্দ্রের।
দেশ জুড়ে এনআরসি-র কাজ কবে শুরু হবে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে লিখিত প্রশ্নের মাধ্যমে তা জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। সেই প্রশ্নের উত্তরে নিত্যানন্দ জানিয়েছেন, দেশ জুড়ে এনআরসি করার ক্ষেত্রে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। সিএএ নিয়ে এক সময়ে প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। আর এখনও পর্যন্ত সেই আইনের ধারা সরকার তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে বলেও মেনে নিয়েছেন রাই। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর কথায়, ‘‘যাঁরা সিএএ-র আওতায় আসবেন, ওই আইনের ধারা তৈরি হলে তাঁদের আবেদন করতে হবে।’’ অসমের এনআরসি প্রসঙ্গে রাই বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অসমের এনআরসি হয়েছিল। যার সঙ্গে গোটা দেশে এনআরসি করার কোনও সম্পর্ক নেই।’’
অথচ, দু’বছর আগে সিএএ ও এনআরসি-কে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়েছিল গোটা দেশ। সিএএ-র আওতায় প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের (হিন্দু, শিখ, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান) নাগরিকত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কেন মুসলিমদের ওই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হল, তা নিয়ে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। তাঁদের অভিযোগ ছিল, ওই আইনের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভাবে মুসলিমদের নিশানা করতে চাইছে সরকার। আর পরবর্তী ধাপে দেশ জুড়ে এনআরসি হলে বৈধ কাগজ ছাড়া ভারতে আসা মুসলিমদের বহিরাগত হিসাবে দাগিয়ে দিয়ে সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে অসমের মতো এই বহিরাগতদের ডিটেনশন ক্যাম্পে ঠাঁই হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিরোধীরা।
এক সময়ে গোটা বিজেপি নেতৃত্ব অসমের পরেই পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি করার দাবি তুললেও, আজ রাইয়ের কথায় স্পষ্ট, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের আগে এনআরসি নিয়ে কিছু করার কথা ভাবছে না মোদী সরকার। নাগরিকত্ব সংক্রান্ত অন্য একটি প্রশ্নের উত্তরে রাই লোকসভায় জানিয়েছেন, ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় ৬,০৮,১৬২ জন ভারতের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। কেবল এ বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ছেড়েছেন ১,১১,২৮৭ জন। পরিবর্তে গত ২০১৬-২০২০ পর্যন্ত ১০,৪৬৫ জন ভারতের নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। যার মধ্যে ৭,৭৮২টি আবেদন পাকিস্তানি নাগরিকদের। আফগানিস্তানের নাগরিকদের ৭৯৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এ ছাড়া, কোনও রাষ্ট্রেরই বাসিন্দা নন (স্টেটলেস) এমন ৪৫২ জন নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন। সব খতিয়ে দেখে গত চার বছরে ৪,১৭৭ জন বিদেশিকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা কোন দেশের, সেই নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।