ফাইল চিত্র।
গত তিন বছরে দেশের পিছিয়ে থাকা ২১% মানুষের সার্বিক জীবনযাত্রার মানোনন্নয়ন সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করলেন নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত। তাঁর যুক্তি, কেন্দ্রের উন্নয়নকামী জেলা পরিকল্পনা প্রকল্পের জন্য ভূ-প্রকৃতিগত কারণে দেশের প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব হয়েছে। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের শাখা সংগঠন ইউএনডিপি-ও নরেন্দ্র মোদী সরকারের উন্নয়নকামী জেলা পরিকল্পনা প্রকল্পের প্রশংসা করে চিঠি দেয় নীতি আয়োগকে। আন্তর্জাতিক ওই সংস্থার তরফে বিশ্বের অন্যান্য দেশকে তাদের পিছিয়ে থাকা এলাকার উন্নয়নে ভারতের ওই মডেল অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
দেশের অনগ্রসর ১১৭টি জেলাকে চিহ্নিত করে তাদের উন্নয়নের সূচকে তুলে আনতে তিন বছর আগে উন্নয়নকামী জেলা পরিকল্পনা হাতে নেয় কেন্দ্র। সরকারের যুক্তি ছিল, ওই জেলাগুলির উন্নয়ন না-হলে দেশের সার্বিক ও সুসংহত উন্নয়ন সম্ভব নয়। নীতি আয়োগ সূত্রের মতে, প্রথম ধাপে মূলত বিদ্যুৎ, সড়ক পানীয় জল ও শৌচালয় পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ওই জেলাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। প্রস্তুত করা হয়েছিল তালিকা। তাতে পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুর— এই পাঁচটি জেলা ছিল। যদিও সে সময় রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না-করে কেন্দ্রের একতরফা ওই চিহ্নিতকরণের প্রতিবাদ করেছিল ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্ত রাজ্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ তুলে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রীর ডাকা উন্নয়নকামী জেলা সংক্রান্ত বৈঠক এড়িয়ে যান ওই দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
নীতি আয়োগের দাবি, তিন বছরের শেষে পিছিয়ে থাকা জেলাগুলির সার্বিক পরিকাঠামো অনেকাংশে উন্নত হয়েছে। যার ফলে আগের তুলনায় উন্নত হয়েছে প্রায় ২১ শতাংশ দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান। আজ সংবাদমাধ্যমকে অমিতাভ কান্ত জানান, পরিকাঠামো সূচকে তুলনামূলক ভাবে এগিয়ে থাকা জেলাগুলির তুলনায় ভাল করেছে উন্নয়নকামী জেলাগুলি। পরিকাঠামোর উন্নয়নের সুফল পাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তা মেনে নিয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জও। ইউএনডিপি-র তরফে নীতি আয়োগকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, স্থানীয় এলাকাভিত্তিক উন্নয়নের প্রশ্নে ওই মডেল বিশেষ কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষত মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলিতে গ্রামীণ পরিকাঠামোগত উন্নয়ন অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে। যে কারণে গত তিন বছরে কার্যত ভোল পাল্টে গিয়েছে গ্রামগুলির। কান্তের কথায়, ‘‘উন্নয়নকামী জেলা পরিকল্পনায় পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি, পিছিয়ে পড়া এলাকায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টির মান যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনই স্থানীয় মানুষের দক্ষতা বৃদ্ধি করে তাঁদের আয় বাড়ানোর চেষ্টা হয়েছে যাতে জীবনযাত্রার সার্বিক মান বাড়ে। ওই পরিকল্পনার ফলে দেশের প্রত্যন্ত ও পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষের জীবনের তৃণমূল স্তরে উন্নতি ঘটানো সম্ভব হয়েছে।’’