সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—ছবি পিটিআই।
প্রচারের শেষ দিনে শেষ কামড় দিচ্ছেন সেনাপতি অমিত শাহ। চষে বেড়াচ্ছেন দিল্লি। গোটা দিন সংসদ-মুখোই হলেন না। সংসদে প্রধানমন্ত্রী যখন বক্তৃতা শুরু করতে যাচ্ছেন, বিরোধীদের অনেকে প্রশ্ন তুললেন, ‘‘ভোট বক্তৃতা হবে না তো?’’ মুখ ফস্কে লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে কিন্তু বেরিয়েই পড়ল, ‘‘ভাইয়ো অউর বহনো!’’
বিরোধীরা রে-রে করে ওঠায় দ্রুত শুধরে নিলেন মোদী। কিন্তু প্রায় পৌনে দু’ঘণ্টার বক্তৃতা অনেকটাই জুড়ে থাকল দিল্লি ভোট। নাম না করলেও নিশানায় রইল শাহিন বাগ।
গত সপ্তাহে এনসিসি-র অনুষ্ঠানে গিয়ে আপাদমস্তক প্রচার শুরু করেছিলেন। শনিবার হয়েছে বাজেট। সোমবার জনসভা, মঙ্গলেও ভোট প্রচার। বুধে রামমন্দিরের ট্রাস্ট ঘোষণা। আজ প্রথমে লোকসভায় বক্তৃতা। বিকাল পাঁচটায় দিল্লি ভোটের প্রচার শেষ হওয়ার পর রাজ্যসভায় বক্তৃতা। কাল অসম। বিরোধীরা বলছেন, এ সব ভোট প্রচার ছাড়া কী?
আজ দিল্লিতে বিজেপির ‘মুখ’ মোদী বারবার শোনালেন, কাজ দেখেই জনতা আরও বেশি আসন দিয়ে তাঁকে কুর্সিতে ফিরিয়েছেন। কংগ্রেস ও বাকিদের বিরোধী আসনে। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী আজ অবৈধ কলোনিকে বৈধ করার কথা বলতে গিয়ে ‘দিল্লি’ শব্দে বাড়তি জোর দিলেন। চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে তুললেন শিখ দাঙ্গার কথা। আর সেই সূত্র ধরেই টেনে আনলেন নাগরিকত্ব আইন ঘিরে বিক্ষোভ ও কংগ্রেস-বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’-এর অভিযোগ।
ক’দিন আগে প্রচারে মোদী বলেছিলেন, ‘‘শাহিন বাগ কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, রীতিমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা।’’ অসমের কথা বলতে গিয়ে আজ সেই ‘পরীক্ষা-নিরীক্ষা’র খোঁচা দিলেন। পরে বললেন, ‘‘সংবিধানের নামে দিল্লি ও দেশে কী হচ্ছে, দেশ দেখছে, বুঝছে। নীরবতা কখনও কাজে আসবে। সুপ্রিম কোর্ট বারবার বলছে, আন্দোলন যেন আমজনতার দুর্ভোগের কারণ না
হয়, হিংসা না হয়। অথচ কংগ্রেস-বামেরা ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করে উস্কানি দিচ্ছে।’’
প্রধানমন্ত্রীর মতে, এত বছর ধরে সংবিধান না মেনে কংগ্রেসেরই উচিত ‘সংবিধান বাঁচাও’ মন্ত্র জপ করা। আবার বামেদের উদ্দেশে তাঁর বক্তব্য, নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী বিক্ষোভে চরমপন্থী যোগের কথা কেরলে বলছেন মুখ্যমন্ত্রী। এখানে ভিন্ন মাপকাঠি কেন?
উত্তরে সীতারাম ইয়েচুরি বলছেন, ভুল প্রেক্ষিত তুলছেন প্রধানমন্ত্রী। আর কংগ্রেস থেকে তৃণমূল, একযোগে সংসদেই প্রশ্ন করেছে, ‘‘গুলি মারার নির্দেশ তো বিজেপি নেতারাই দিচ্ছেন। তাঁদের কথা কানে যায় না আপনার?’’ সত্যিই মোদী সে সবে আমল দিলেন না। উল্টে শোনালেন, রাজস্থান-মধ্যপ্রদেশের মতো কংগ্রেসশাসিত রাজ্যে বিধানসভায় পাশ করা আইনের বিরোধিতা হলে কী হবে? বিরোধীরা বলছেন, এ কি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি? ‘নীরব’ হিন্দুদের প্রতি বার্তা? ভারসাম্য রাখতে মোদীর মুখে উঠে এল ‘আল্লাহ’, মুসলিম ‘বোন’দের তিন তালাক, খান আবদুল গফ্ফর খানের পা ছোঁয়ার গল্পও। শশী তারুর পরে কটাক্ষ করে বললেন, ‘‘এ সবই ভেক। মেরুকরণই বিজেপির একমাত্র অস্ত্র।’’