নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ভোটের আসর জমে উঠল। এ বার ভোটের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য বিজেপি-র হাতে নতুন একটি অস্ত্র এসেছে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তা হল প্রধানমন্ত্রীর ‘প্রাণসংশয়’।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, সম্প্রতি পঞ্জাবে প্রধানমন্ত্রীর কনভয় কৃষক বিক্ষোভের মুখে পড়ার ঘটনাটিকে রাজনৈতিকভাবে যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি তথা আরএসএস নেতৃত্ব, তার নির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। পাঁচ রাজ্যের ভোটে নরেন্দ্র মোদীকে প্রচারের কেন্দ্রে ফিরিয়ে আনাটাই লক্ষ্য বিজেপি-র। সেই অনুযায়ী প্রচারও সাজানো হচ্ছে।
মূল্যবৃদ্ধি থেকে কৃষক অসন্তোষ. বেকারত্ব থেকে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা— উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাবের মতো বড় রাজ্যগুলিতে বিজেপি-র উপর ক্ষোভের আঁচ দলের কর্তারা টের পাচ্ছেন না এমন নয়। পঞ্জাবে যে জনসভাটি করতে যাচ্ছিলেন মোদী, সেখানেই আসন প্রায় পুরোটাই খালি ছিল বলে স্থানীয় সূত্রের বক্তব্য। লখিমপুর খেরির ঘটনা নিয়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। শুধুমাত্র তিনটি কৃষি আইন বাতিল করে সেই ক্ষোভে প্রলেপ দেওয়া যাবে না, এটাও না বোঝার কথা নয় মোদী-অমিত শাহের। তাই নতুন বোতলে বিজেপি ‘মহৌষধ’ বিক্রির চেষ্টা করছে, এমনটাই মনে করছেন অনেকে।
বিজেপি-র বিভিন্ন শাখা সংগঠনগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রীর ঘটনাটিকে ঘিরে ভাষ্য তৈরি করে তা প্রচার করতে। দলীয় সূত্রের বক্তব্য, এর আগেও মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণকে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদের দিকেই ঘুরিয়ে দিয়ে ভোটে লাভবান হয়েছিল বিজেপি। পঞ্জাব সরকারকে খলিস্তানি শক্তির সঙ্গে একই বন্ধনীতে রাখার কৌশলও নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশে ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা বিবেক ঠাকুর বলছেন, “পঞ্জাবের সরকার সেই লাইন নিয়েই চলছে, যা খালিস্তানিদের মতাদর্শ। জাতীয় নিরাপত্তা, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে তারা ভোটে জেতার জন্যই মরিয়া।”
উত্তরপ্রদেশেরই আর এক বিজেপি নেতা রাকেশ ত্রিপাঠীর কথায়, “মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রাণ নিয়ে ছেলেখেলা করায়। মানুষ এর জবাব দেবেন।” গত কয়েক দিন সমস্ত বিজেপি শীর্ষ নেতাদের দেখা গিয়েছে মন্দিরে গিয়ে পুজো করতে। ত্রিপাঠীর কথায়, “পরিকল্পনা করে কিছু করা হয়নি। দেশের মানুষ যে ভাবে ওই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন, দল স্বতঃস্ফূর্তভাবে তার অনুসরণ করেছে মাত্র।”
অন্য দিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওযালার কথায়, “বিজেপি বলছে মোদীর নাকি প্রাণসংশয় হয়েছিল!কীসের প্রাণ সংশয়? কাকে তিনি ভয় পাচ্ছেন? মোদী কি দেশের কৃষকদের ভয় পাচ্ছেন? এর থেকে বড় অপমান কৃষকদের আর কী হতে পারে? পঞ্জাবের ৩ কোটি মানুষ এবং দেশের ৬২ কোটি কৃষক কি তাহলে দেশদ্রোহী? প্রধানমন্ত্রী আপনি এই বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করুন।”