প্রধানমন্ত্রী হয়েই ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠান শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
৯৬ হয়ে গেল। প্রতি মাসের শেষ রবিবার অল ইন্ডিয়া রেডিয়োয় ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠান করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই হিসাবে এপ্রিল মাসে সেঞ্চুরি হয়ে যাবে। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পরেই শুরু করেছিলেন এই অনুষ্ঠান। প্রথম দিনটা ছিল ৩ অক্টোবর। দুর্গাপুজোর দশমীকেই দেশবাসীর কাছে তাঁর মনের কথা বলা শুরু করার জন্য বেছেছিলেন প্রাক্তন আরএসএস প্রচারক মোদী। ঘটনাচক্রে বিজয়াদশমী সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা দিবস।
মোদী কেন এই অনুষ্ঠান শুরু করেছিলেন সে কথা জানান অনেকটা পরে। ৫০তম এপিসোডে উল্লেখ করেছিলেন সেই গল্প। বলেছিলেন, ‘‘আজকের যুগে মানুষ যখন রেডিয়ো-কে প্রায় ভুলতে বসেছিল, সেখানে মোদী কেন রেডিয়োকে ফিরিয়ে আনল? এ নিয়ে আমি আপনাদের একটা গল্প বলি।’’ ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর শুনিয়েছিলেন ১৯৯৮ সালের গল্প। সেই সময় তিনি হিমাচল প্রদেশে বিজেপি নেতা হিসেবে কাজ করতেন। মোদী বলেন, ‘‘মে মাসের সন্ধেবেলা আমি কোনও পাহাড়ি অঞ্চলে কাজ করতে যাচ্ছি। হিমাচলের ঠান্ডায় রাস্তার ধারে একটা চায়ের দোকানে চা খেতে দাঁড়িয়ে চা চাইলাম। খুব ছোট দোকান, কোনও ছাদ নেই, একটা ঠেলা গাড়িতে সব রেখে একা হাতেই একজন মানুষ চায়ের দোকান চালাচ্ছেন। তিনি একটা কাঁচের প্লেটে মিঠাই দিয়ে বললেন আগে মিষ্টিমুখ করুন তারপর চা খাবেন।’’
মোদী গল্পের মতো করেই বলেছিলেন, ‘‘ জানতে চাইলাম, বাড়িতে কোনও বিয়ে-শাদি বা পুজোআচ্চা হয়েছে কি! এ কি তার মিষ্টি! দোকানি বলল, আরে না না, আপনি কি খবর রাখেন না? এ কথা বলার সঙ্গে তাঁর এত খুশি ও উচ্ছ্বাস দেখে আমি জানতে চাইলাম, আরে কি খবর, সেটা বলুন আমাকে! তিনি বললেন, আরে আজ ভারত বোম ফাটিয়েছে। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। এ বার দোকানি বললেন, এই নিন রেডিয়ো শুনুন। রেডিয়োয় শুনলাম, সেই বোমা ফাটানো নিয়ে আলোচনা চলছে। দোকানি জানাল প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীজি সেই বোমা ফাটানোর, পরমাণু বোমার পরীক্ষার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, সেই দিনটির তাৎপর্য নিয়ে রেডিয়োতে বলেছেন, তিনি শুনেছেন।’’ গল্পের মধ্যেই ফাঁস করেন রেডিয়ো প্রতি তাঁর টান তৈরির কারণ। বলেন, ‘‘দোকানদার ভদ্রলোকের খুশি, নাচ দেখতে দেখতে আমি ভাবছিলাম জনমানবশূন্য এই এলাকা, বরফে ঘেরা পাহাড়ি অঞ্চলে, জঙ্গলের মাঝে এই দোকানি সারাদিন রেডিয়ো শুনছেন তাঁর এই দোকানে। রেডিয়ো তাঁর মনে বড় প্রভাব বিস্তার করছে, অনেক খবর পাচ্ছেন। তখনই আমি উপলব্ধি করেছিলাম আমাদের রেডিয়ো প্রত্যেক মানুষের সব থেকে কাছে পৌঁছতে পারে, জুড়তে পারে মানুষকে। রেডিয়োার প্রবল ক্ষমতা। রেডিয়োর কম্যুনিকেশন রিচ এবং তার সুদূরপ্রসারী প্রভাবের কথা আমি সেই থেকে ভেবে চলেছি। এরপর যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হলাম সব থেকে শক্তিশালী সংযোগ মাধ্যমের সাহায্য নেব এটাই স্বাভাবিক।’’
মোদীর ৫০তম ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানের পরে তা নিয়ে বইও হয়ছে। কী ভাবে এই অনুষ্ঠান রেডিয়োকে বাঁচিয়ে রেখেছে তা নিয়েও গবেষণা হয়েছে। ‘মন কী বাত — আ সোশ্যাল রেভলিউশন অন ইন্ডিয়া’ নামের বইটির উদ্বোধন করেছিলেন প্রয়াত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেইসঙ্গে অল ইন্ডিয়া রেডিয়োর আয়ও যে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে তারও উল্লখে করা হয়। এই অনুষ্ঠান থেকে কেমন আয় হয় তার একটা হিসাবে সংসদেও পেশ করা হয়েছিল। সর্বশেষ হিসাব বলছে শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকা। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দেওয়া হিসাব মতো প্রথম বছর (২০১৪-২০১৫) আয় হয় ১.১৬ কোটি টাকা। পরের বছর সেটা বেড়ে হয় ২.৮১ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ আর্থিক বছরে আয় হয় ৫.১৪ কোটি টাকা আর ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে সেই আয় বেড়ে হয় ১০.৬৪ কোটি টাকার বেশি।
মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেও এই অনুষ্ঠান চালিয়ে যান। তবে গত কয়েক বছরে রোজগার অনেকটাই কমেছে। ২০১৮-১৯ সালে আয় হয়েছে ৭.৪৭ কোটি টাকা আর ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে ২.৫৬ কোটি টাকা। ২০২০-২১ সালে আয় ১.০২ কোটি টাকা। এখন অবশ্য শুধু অল ইন্ডিয়া রেডিয়োই এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে না, সংস্থার ইউটিউব চ্যানেলেও থাকে। এ ছাড়াও সমাজমাধ্যম ও বিভিন্ন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। বিভিন্ন ভাষায় মোদীর মনের কথাও সম্প্রচার করে রেডিয়ো এবং দূরদর্শন। সেই সব মেলালে সরকারের রোজগার আরও বেশি হবে।