আছড়ে পড়েছে পাক গোলা। বৃহস্পতিবার রামগড় সেক্টরের নান্হা গ্রামে। ছবি: পিটিআই।
জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের প্ররোচনাহীন আক্রমণের জবাব ভারত ট্রিগারের ভাষাতেই দেবে বলে জানাল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নীরবতার কড়া সমালোচনা করেন বিরোধীরা। আজ মহারাষ্ট্রের বারামতীতে দাঁড়িয়ে মোদী বলেন, “শত্রুরা বুঝতে পারছে সময় বদলেছে। তাদের পুরনো অভ্যাস আর বরদাস্ত করা হবে না।” প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় পাকিস্তানকে ‘শত্রু’ বলে উল্লেখ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আপাতত ভারত যে কোনওভাবেই আলোচনার পথে হাঁটবে না তাও কার্যত স্পষ্ট করেছেন মোদী। তাঁর কথায়,“মানুষ আমার মনোভাব জানেন। যেখানে জওয়ানদের কথা বলা দরকার, সেখানে তাঁরা কথা বলছেন ট্রিগারে আঙুল ঠেকিয়ে।” বিরোধীদের সমালোচনার জবাবও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জানিয়েছেন, রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য সীমান্তে জওয়ানদের মনোবল ভাঙা উচিত নয়।
আজ মোদীর পাশাপাশি সুর চড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলিও। জেটলি বলেন, “পাকিস্তান যদি এই অভিযান চালিয়ে যায় তাহলে ভারতীয় সেনারা তার এমন জবাব দেবেন, যার মূল্য চোকানো পাকিস্তানের পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।” পাক হাইকমিশনার মনসুর আহমেদ খানকে ডেকে কড়া ভাষায় সীমান্তে হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
আজও নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর দু’দেশের মধ্যে মর্টার, গুলি বিনিময় চলেছে। বেলা ১১টা পর্যন্ত পার্গওয়াল, কানাচক, আর্নিয়া এবং রামগড় সেক্টরে পাক সেনা হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে। কাল রাতে সীমান্তের ১৯২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে আক্রমণ শানিয়েছে পাক রেঞ্জার্স। বিএসএফ সূত্রে বলা হয়েছে, ‘পাক বাহিনী মাঝ রাত পর্যন্ত কোনও প্ররোচনা ছাড়াই মর্টার ছুড়েছে। আমাদের পোস্টগুলিতে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৬০টি সীমান্ত পোস্ট।” পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের অধীনে একটি দল গঠন করেছে কেন্দ্র।
নভেম্বরে নেপালে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে সেখানে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।
দিল্লিতে নিযুক্ত পাক হাইকমিশনার বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলায় ভারত-পাক বিদেশসচিব পর্যায়ের বৈঠক বাতিল হয়েছিল। গত মাসে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ উস্কে দেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ফলে তখনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়নি। কূটনৈতিক সূত্রে খবর, সার্ক সম্মেলনের সময়ে তাই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু এখন মোদীর পক্ষে আলোচনার কথা ভাবা সম্ভব নয়। রাজনীতিকদের মতে, সামনেই মহারাষ্ট্রের নির্বাচন। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট তোপ দাগতে শুরু করেন কংগ্রেস-সহ বিরোধী নেতারা। আজ এনসিপি নেতা শরদ পওয়ারের গড় মহারাষ্ট্রের বারামতীতে দাঁড়িয়ে শুধু পাকিস্তানই নয়, বিরোধী নেতাদেরও পাল্টা আক্রমণ করেছেন মোদী।
রাজনীতিকদের মতে, নওয়াজ শরিফ ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু সেনা ও মোল্লাতন্ত্রের চাপে তিনি আপাতত সীমান্তে সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাশ্মীর প্রসঙ্গ জিইয়ে রাখার এই ছকে সামিল হতে হয়েছে তাঁকে। সম্প্রতি বেশ কয়েক বার চিনা অনুপ্রবেশের মুখে পড়েছে ভারত। পাকিস্তান ও চিনের সঙ্গে একই সময়ে সীমান্ত-উত্তেজনা চায় না নয়াদিল্লিও। কিন্তু পাকিস্তান ক্রমাগত হামলা চালালে জবাব না দিয়েও উপায় নেই। তাই আপাতত বুলেটই ভরসা মোদীর।