আয়কর রিটার্ন সরল করতে চান মোদী

আয়কর রিটার্নের নতুন আবেদনপত্র ঘিরে প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। অভিযোগ, অকারণে তাকে জটিল করে ফেলার। সেই প্রশ্নের মুখে পড়েই এ বার ওই আবেদনপত্র বদলাতে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, সংসদে অর্থ বিল পাশ হওয়ার সময় জবাবি বক্তৃতাতেই এ নিয়ে ঘোষণা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

Advertisement

জয়ন্ত ঘোষাল

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৩
Share:

আয়কর রিটার্নের নতুন আবেদনপত্র ঘিরে প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। অভিযোগ, অকারণে তাকে জটিল করে ফেলার। সেই প্রশ্নের মুখে পড়েই এ বার ওই আবেদনপত্র বদলাতে চলেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক।

Advertisement

মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্রের খবর, সংসদে অর্থ বিল পাশ হওয়ার সময় জবাবি বক্তৃতাতেই এ নিয়ে ঘোষণা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে পারেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

আয়কর রিটার্নের প্রস্তাবিত নতুন আবেদনপত্র নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত এই অর্থবর্ষের শুরু থেকেই। গত আর্থিক বছরের (২০১৪-’১৫) জন্য আয়কর রিটার্নের আবেদনপত্র কেমন হবে, সেই প্রস্তাব অনুযায়ী, আয়করদাতাদের বিদেশে যাওয়ার তথ্য জানাতে হবে। কী কী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট চালু বা বন্ধ করা হয়েছে, জানাতে হবে সে সম্পর্কেও। আর এ সব নিয়েই আপত্তি ওঠে। অনেকেরই অভিযোগ, রিটার্নের পদ্ধতি সরল করার বদলে আসলে তা আরও জটিল করে ফেলছে কেন্দ্র।অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, কালো টাকা রুখতে যে বিশেষ তদন্তকারী দল (স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট) তৈরি হয়েছিল, তাদের এবং আর্থিক ক্ষেত্রের অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার সুপারিশেই আবেদনপত্রে ওই ধরনের নানা তথ্য চাওয়া হয়। কিন্তু এতে রিটার্নের প্রক্রিয়া জটিল হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি মোদী-সরকারের সমালোচনা শুরু করেন বিশেষজ্ঞরাও।

Advertisement

এই পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রক সূত্রে দাবি, প্রস্তাবিত আবেদনপত্র সরলই থাকবে। কালো টাকা রুখতে বাড়তি যে সব তথ্য চাওয়া হবে, সেগুলি আবেদনপত্রের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে আলাদা সংযোজনীতে। ফলে সেখানে যাঁর যে সমস্ত তথ্য দেওয়ার আছে, তিনিই তা দেবেন। কিন্তু ৯৫ শতাংশ আয়করদাতাকে ওই সংযোজনী নিয়ে মাথাই ঘামাতে হবে না। এ ভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হতে পারে। জেটলি এ নিয়ে মন্ত্রকের কর্তাদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডেকেছেন। অর্থ মন্ত্রকের কথা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সঙ্গেও।

আয়কর রিটার্নের আবেদনপত্র নিয়ে যখন বিতর্ক শুরু হয়, সেই সময় ওয়াশিংটনে ছিলেন জেটলি। সেখান থেকেই তিনি রাজস্ব সচিব শক্তিকান্ত দাসের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। তখন ঠিক হয়, প্রস্তাবিত আবেদনপত্র ঘিরে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে। চেষ্টা হবে তা সরল করার।

মোদী-সরকারের একাংশের বক্তব্য, ইউপিএ জমানার অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সময়েই রিটার্নের আবেদনপত্র জটিল হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু আগের সরকারের দিকে আঙুল তুললেই দায় এড়ানো যাবে না বুঝে তা সরল করার চেষ্টা শুরু হয়।

প্রস্তাবিত আবেদনপত্র নিয়ে কর বিশেষজ্ঞদের আপত্তি রয়েছে। তাঁদের দাবি, কালো টাকা রুখতে কেন্দ্র বাড়তি তথ্য চাইছে ঠিকই। কিন্তু এত তথ্য দিতে গেলে রিটার্ন জমা দেওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে। কেউ বিদেশে গিয়ে স্বস্তি পাবেন না। কারণ, সেখানেও তাঁকে যাবতীয় বিলের হিসেব রাখতে হবে। এমনকী পাসপোর্ট নম্বর থেকে শুরু করে কোন কোন দেশে গিয়েছেন, সফরে কত খরচ হয়েছে— সব তথ্যই জানাতে হবে আবেদনপত্রে। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয় সোশ্যাল মিডিয়াতেও। অনেকে কটাক্ষ করেন যে, বারবার বিদেশ যাওয়ায় এর দরুন সবথেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হবে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেই। এ ছাড়া, অর্থবর্ষের শেষ দিনে কোন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিল, তা-ও জানতে চাওয়া হয়। অন্য কারও সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকলে, চাওয়া হয় তার তথ্য। এই সব নিয়েও আপত্তি ওঠে বিভিন্ন তরফে।অনেকের প্রশ্ন, আগের বছর এমনিতেই আয়করদাতাদের বিদেশে সম্পত্তির যাবতীয় তথ্য জানাতে বলা হয়েছিল। তারপরেও এই সব কিছু নতুন করে জানতে চাওয়ার মানে কী? প্যান নম্বর থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু তথ্য নতুন করে জানতে চাওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে।

উল্টো দিকে, আয়কর কর্তাদের যুক্তি ছিল, কালো টাকা রুখতেই এই সব তথ্য চাওয়া। দেখে নেওয়া যে, এ দেশে রোজগারের টাকায় কেউ বিদেশে কী পরিমাণ সম্পত্তি কিনছেন। বিদেশ সফর সংক্রান্ত তথ্য দিতে গিয়ে যাতে কারও ব্যক্তিগত পরিসরে হাত না-পড়ে, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হয়েছিল বলেও তাঁদের দাবি। কিন্তু তাঁরা যা-ই বলুন, সমালোচনার মুখে এখন রিটার্নের রাস্তা সরলই করতে চাইছেন জেটলি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement