বরণ। ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে নরেন্দ্র মোদী। রবিবার। — নিজস্ব চিত্র।
বৈদিক স্তোত্র এবং উলুধ্বনিতে তখন গমগম করছে মতিঝিলের শতবর্ষ প্রাচীন রামকৃষ্ণ মিশন প্রাঙ্গণ। পুজো দিতে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মন্দিরে শিবলিঙ্গকে স্নান করিয়ে, ফুলের অর্ঘ্য দিয়ে আরতি করলেন তিনি। ‘নমো প্রভু বাক্যমনাতীত’ গানের সঙ্গে গলা মেলালেন। মন্দিরের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সন্ন্যাসীদের সঙ্গে স্তোত্র পাঠও করলেন।
শনিবার দিনভর কূটনৈতিক বৈঠক সেরে রবি সকালেই মন্দির সফরে বেরোন মোদী। বাংলাদেশের সফর চূড়ান্ত হওয়ার পরেই মোদী তাঁর সচিবালয়ের কর্তাদের জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশন এবং ঢাকেশ্বরী মন্দির দর্শন করতে চান তিনি। এটা ঘটনা যে, মোদী এর আগে যখন যে দেশে গিয়েছেন, সময় বের করে সেখানকার হিন্দু মন্দির অথবা ধর্মস্থানে গিয়েছেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যে তার ব্যতিক্রম হবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঢাকার মন্দিরে তাঁকে নিয়ে যে উচ্ছ্বাস দেখা গেল, তা বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল শিবির। বাংলাদেশে বিভিন্ন ঘটনায় সামাজিক এবং রাজনৈতিক স্তরে সাম্প্রদায়িক হিংসার বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। এ নিয়ে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন দিল্লি কথাও বলেছে ঢাকার সঙ্গে। আজ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকেও বিষয়টি তোলেন মোদী। পাশাপাশি এই মন্দির সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে একটি বার্তাও মোদী দিলেন বলেই মনে করছেন অনেকে।
এ দিন মতিঝিলের রামকৃষ্ণ মিশনে প্রাঙ্গণে ঢোকার পরে মোদীকে গুজরাতি ঢঙে চন্দন এবং কুমকুমের তিলক দিয়ে বরণ করা হয়। এর পরে মোদী খোঁজ নেন মঠ ও মিশনের প্রেসিডেন্ট স্বামী আত্মস্থানন্দের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে। প্রধানমন্ত্রীর মায়ের জন্য একটি সাদা উত্তরীয় উপহার দেন স্বামী সুহিতানন্দ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্বামী শুভকরানন্দও। মিশনের পক্ষ থেকে মোদীকে ‘রামকৃষ্ণ লীলা প্রসঙ্গ’ এবং ‘যুগনায়ক স্বামী বিবেকানন্দ’— এই দু’টি বইয়ের গুজরাতি অনুবাদ উপহার দেওয়া হয়।
সূত্রের খবর, মোদী জানিয়েছেন, এই মন্দিরটিতে তাঁর কিছুক্ষণ ধ্যান করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সময়ের অভাবে তা করতে পারলেন না। বাংলাদেশের বুকে রামকৃষ্ণ মিশনের কাজকর্মের ভূয়সী প্রশংসা করেন মোদী। পুজো শেষ হলে মন্দির প্রাঙ্গণে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন তিনি। অনেকের সঙ্গে করমর্দনও করেন।