Rajnath Singh

রাজনাথের বৈঠকে আচমকাই হাজির মোদী

দূরদর্শনে হঠাৎ নির্দেশ আসে রাজনাথের প্রশ্নোত্তর দেখানোর। সেখানে যে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি দর্শকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২০ ০৩:২২
Share:

—ফাইল চিত্র।

প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদনে দেশীয় সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বাজেটে আলাদা করে অর্থ রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। আজ বণিকসভা ফিকি-র আয়োজনে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি ভার্চুয়াল আলোচনাসভায় অপ্রত্যাশিত ভাবে উপস্থিত হয়ে এ কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই।

Advertisement

এ দিনের আলোচনাসভায় গোড়া থেকে নরেন্দ্র মোদী ছিলেন না। থাকার কথাও ছিল না তাঁর। বরং কী ভাবে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়া সম্ভব, আমলাদের সঙ্গে নিয়ে সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রশ্নোত্তর পর্ব থামিয়ে হঠাৎই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা বলতে শুরু করেন, ‘‘আমাদের মধ্যে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে এক বিশেষ অতিথি এসে উপস্থিতি হয়েছেন!’’ যিনি উপস্থিত হয়েছেন তাঁর গোটা মুখের অর্ধেকটাই আবার নিজের উত্তরীয় দিয়ে ঢাকা। কে সেই অতিথি, কিছুতেই ঠাওর করতে পারছিলেন না রাজনাথ। সমস্যা বুঝে দ্রুত উঠে আসেন পাশে বসা চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়ত। রাজনাথের কানে ফিসফিসিয়ে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এসেছেন।’’

প্রধানমন্ত্রী! শুনেই নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসে রাজনাথ সম্ভবত জানতে চান, কোথায়? প্রতিরক্ষা মন্ত্রকেই এসেছেন নাকি! তখন তাঁকে বলা হয়, ‘‘না! ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় যোগ দিয়েছেন।’’ বিষয়টি দ্রুত বুঝে নিয়ে তখন গোড়া থেকে এ পর্যন্ত যা আলোচনা হয়েছে, সারসংক্ষেপে রাজনাথ বুঝিয়ে দেন মোদীকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনার তৃতীয় ঢেউই চিন্তা

আরও পড়ুন: উর্দুর বেশি কদর মোদী জমানায়, দাবিতে প্রশ্ন

এ দিকে রাজনাথ যখন অপ্রস্তুত, তখন অন্য দিকে রীতিমতো বিড়ম্বনায় দূরদর্শন কর্তারাও। কারণ সেই সময় জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের পরে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সাংবাদিক সম্মেলন চলছিল। দূরদর্শনে সেটা দেখানোর মধ্যেই হঠাৎ নির্দেশ আসে রাজনাথের প্রশ্নোত্তর দেখানোর। সেখানে যে প্রধানমন্ত্রী যোগ দিয়েছেন, তা প্রথমে বুঝতে পারেননি দর্শকরা। পরে স্ক্রিনের অর্ধেক অংশ জুড়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখানোয় বোঝা যায়, কেন নির্মলার প্রশ্নোত্তর পর্ব ছেড়ে দর্শকদের উড়িয়ে নিয়ে আসা হল ফিকি-র অনুষ্ঠানে।

আজ নিজের বক্তব্যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সরকারি সংস্থার সঙ্গে বেসরকারি বড়-ছোট সব ধরনের উদ্যোগপতি এবং স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মোদী। তিনি বলেন, “প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রের সরঞ্জাম ভারতীয় সংস্থার মাধ্যমে বানানোর জন্য মন্ত্রকের বাজেট খাতের একটি অংশ আলাদা করে রেখে দেওয়া হবে।” সরকারি সূত্রের মতে, আলাদা বাজেটের ব্যবস্থা করে দেশীয় সংস্থাগুলিকে উৎসাহ দেওয়াই সরকারের উদ্দেশ্য।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, “স্বাধীনতার সময়ে প্রতিরক্ষা সামগ্রী উৎপাদনের প্রশ্নে ভারত যথেষ্ট সমর্থ ছিল। এ ক্ষেত্রে ভারতের প্রায় একশো বছরের পুরনো ইতিহাসও ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ওই দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়নি। যার ফলে আজ ভারত প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশের উপর নির্ভরশীল।” মোদী মনে করিয়ে দেন, “সরকার ইতিমধ্যেই ১০১টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের তালিকা তৈরি করেছে যা কেবল এ দেশেই তৈরি হবে। দ্বিতীয় একটি তালিকাও তৈরির কাজ চলছে।”

প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, এ বছরের শেষে দ্বিতীয় তালিকাটি সর্বসমক্ষে আনতে চলেছে সরকার। প্রথম যে তালিকা তৈরি হয়েছে, তাতে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, ক্ষেপণাস্ত্র, কামান, যুদ্ধে ব্যবহারের হাল্কা হেলিকপ্টার থেকে ভারী পণ্যবাহী বিমান রয়েছে। সরকারের মতে, এতে আগামী ছয় থেকে সাত বছরে অন্তত চার লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে ভারতের।

বিরোধীদের কটাক্ষ, যে সরকার আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার ডাক দিচ্ছে, সেই সরকারই প্রতিরক্ষায় ৭৫ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের পথ খুলে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, সরকার চায় সেখানেও দেশীয় সংস্থাগুলি এই সুযোগে বিদেশি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদনে এগিয়ে আসুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement