ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী, সনিয়া গাঁধী থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা, বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, প্রতিরক্ষার সঙ্গে জুড়ে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এমনকি সচিন তেন্ডুলকরের মতো ক্রীড়া জগতের বিশিষ্টরা— তালিকায় কে নেই? ভারতের প্রশাসন, রাজনীতি, বাণিজ্য, বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জুড়ে থাকা প্রায় ১০ হাজার প্রভাবশালী ব্যক্তির উপর গোপনে নজরদারি চালাচ্ছে একটি চিনা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। গালওয়ান সংঘর্ষের পরে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখনই এমন খবর সামনে নিয়ে এসেছে একটি সর্বভারতীয় দৈনিক। আজ তাদের এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই গোটা বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে কংগ্রেস।
দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক— এই যুক্তিকে সামনে রেখে শতাধিক চিনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করেছে মোদী সরকার। এই পরিস্থিতিতে শেনঝেনের তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ‘শেনহুয়া ডেটা ইনফরমেশন টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে ভারতে এত ব্যাপক আকারে নজরদারি চালানোর অভিযোগ উঠল। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্থাটির থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে শি চিনফিং সরকার, চিনের সেনাবাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি ও চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। ভারতের জঙ্গি, অপরাধ জগৎ, আর্থিক দুর্নীতিতে জড়িতদের সম্পর্কেও তথ্য সরবরাহ করে সংস্থাটি।
প্রায় দু-মাস ধরে ওই বিতর্কিত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কাজকর্মের দিকে নজর রেখে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, মাত্র দু’বছর আগে তৈরি সংস্থাটি শুধু ভারত নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহির মতো দেশগুলির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। একে ‘ওভারসিজ় কি ইনফরমেশন ডেটাবেস’ বলে থাকে তারা। বিভিন্ন দেশে সংস্থাটির ২০টি প্রসেসিং সেন্টার রয়েছে।
১ সেপ্টেম্বর সংস্থাটির ইমেলে প্রশ্ন পাঠিয়ে তাদের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল সংবাদপত্রটি। জবাব মেলেনি। উল্টে দেখা যায়, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে শেনহুয়ার ওয়েবসাইট দেখা যাচ্ছে না। ওই সংবাদপত্রের প্রতিনিধি সংস্থার শেনঝেনের প্রধান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে সংস্থার এক কর্মী বলেন, ‘‘এ সব প্রশ্ন আমাদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তার পরিপন্থী। তাই উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।’’
তবে নয়াদিল্লিতে চিনা দূতাবাসের একটি সূত্র দাবি করেছে, চিনের সরকার কোনও ব্যক্তি কিংবা সংস্থাকে স্থানীয় আইন লঙ্ঘন করে তথ্য সরবরাহ করতে বলেনি, বলবেও না। পিছনের দরজা দিয়ে পাওয়া কোনও তথ্য তারা সংগ্রহ করে না। অবশ্য চিনের সরকার ও সেনাবাহিনীকে তথ্য সরবরাহ করে থাকে বলে সংস্থাটি যে দাবি করেছে, তা নিয়ে নির্দিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেননি দূতাবাসের সূত্রটি।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস। কেন্দ্র বিষয়টির তদন্ত করে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করবে কি না, তা জানতে চেয়েছেন কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা। টুইটারে তিনি বলেন, খবরটি যদি সত্যি হয়, তা হলে বিষয়টি কি মোদী সরকারের নজরে ছিল না? এ দিকে, কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স-এর মতো সংগঠন দাবি করেছে, ভারতীয় সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে, এমন চিনা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে মোদী সরকার ব্যবস্থা নিক।