‘ভগবানের রূপে আপনাকেই দেখেছি’— জনৌষধি প্রকল্পে উপকৃত দীপা শাহের বার্তা ছুঁয়ে গেল নরেন্দ্র মোদীকেও।
‘আমি ভগবান দেখিনি। কিন্তু ভগবানের রূপে আপনাকে দেখেছি। আপনার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
দেহরাদূনের দীপা শাহের মুখে এ কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাথা নিচু করে ফেললেন। বোঝা গেল, চোখের জল আটকানোর চেষ্টা করছেন। ঠোঁট কাঁপছে। গলাও বুজে গেল।
আজ সকালে ‘প্রধানমন্ত্রী ভারতীয় জনৌষধি পরিযোজনা’-বা জেনেরিক ড্রাগসের দোকান থেকে সস্তায় ওষুধ বিক্রির ফলে কে কেমন সুবিধা পাচ্ছেন, তা নিয়ে বিভিন্ন শহরের মানুষের সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন মোদী। তখনই এই ঘটনা।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
দেহরাদূনের দীপা তাঁকে বলেন, ‘‘২০১১-য় আমার পক্ষাঘাত হয়েছিল। কথাও বলতে পারতাম না।’’ দীপা কথা শুরু করতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখে মনে হচ্ছে, আপনার দাঁড়াতে অসুবিধা হচ্ছে। আপনি বসুন।’’ দীপা বলেন, ‘‘আগে মাসে ৫ হাজার টাকার ওষুধ কিনতে হত। এখন জনৌষধি প্রকল্পে ১,৫০০ টাকায় ওষুধ পাই। মাসে যে টাকা সঞ্চয় হয়, তা দিয়ে ফল ও অন্যান্য খাবার কিনে খাই।’’ এর পরেই দীপা মোদীকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করেন। প্রধানমন্ত্রী আবেগ সামলে দীপাকে বলেন, ‘‘আপনার আত্মবিশ্বাসই আপনার ভগবান।’’
এর আগেও দেখা গিয়েছে মোদীর কান্না, দেখুন ভিডিয়ো:
প্রধানমন্ত্রী এ কথা বললেও, বিরোধীরা বলছেন, মোদী সত্যিই নিজেকে এখন ভগবান ভাবতে শুরু করেছেন। মোদী সরকারের প্রকল্পে আমজনতা কেমন উপকৃত হচ্ছে, তা তুলে ধরতেই ভিডিয়ো কনফারেন্স এবং দূরদর্শনে তা সরাসরি সম্প্রচার—পুরোটাই চিত্রনাট্য অনুযায়ী প্রচারের অঙ্গ। কেউ কেউ বলছেন, অর্থনীতিতে ঝিমুনি ধরেছে, একের পর এক ব্যাঙ্ক ডুবছে, প্রতিবাদ ও সংঘর্ষ চলছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রচারে ব্যস্ত।
আরও পড়ুন: ‘অভিযুক্ত’ প্রার্থী কেন, জানাতে হবে কমিশনকে
মোদীর কান্না
২০ মে, ২০১৪: লোকসভায় জয়ের পরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে দলের বৈঠকে
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫: আমেরিকায়। ফেসবুকের দফতরে আলাপচারিতায় মায়ের কথা বলতে গিয়ে
২২ জানুয়ারি, ২০১৬: হায়দরাবাদে। আত্মঘাতী দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার মায়ের কথা বলতে গিয়ে
১৩ নভেম্বর, ২০১৬: গোয়ায়। দেশের জন্য ঘর ছাড়ার কথা বলতে গিয়ে
৭ অগস্ট, ২০১৯: সুষমা স্বরাজের প্রয়াণের পরে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে
দীপার পরে কাশ্মীরের পুলওয়ামা থেকে প্রবীণ গুলাম নবি যখন বারবার মোদীকে ‘জনাব’ বলে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তখনও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছেন মোদী। আবেগ সামলে বলেন, তাঁর বন্ধু, কংগ্রেসের নেতা, আর এক গুলাম নবিকে তিনি এই অভিজ্ঞতার কথা জানাবেন।
পুণে থেকে কিডনির রোগী, ৪১ বছরের জেবা খান তাঁর চিকিৎসার খরচ কমে আসার কথা জানানোয়, মোদী প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এত কম বয়সে কী করে কিডনির রোগ হল?’’ জেবার জন্য তিনি আল্লার কাছে প্রার্থনা করবেন বলেও জানান। এর আগেও অবশ্য একাধিক বার প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। তবে বছর চারেক আগে আত্মঘাতী দলিত ছাত্র রোহিত ভেমুলার (যাঁর মৃত্যুর জন্য ছাত্র সংগঠন এবিভিপি-র দিকে আঙুল ওঠে) মায়ের কথা প্রসঙ্গে তিনি যখন চোখের জল ফেলেছিলেন, বিরোধীরা একে ‘কুম্ভীরাশ্রু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।