মোদী সরকার কি নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়াতে চাইছে?
সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির এজলাসটা ঘুরে দেখার ইচ্ছে হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। শুধু এজলাসেই যাননি। একেবারে প্রথম সারিতে যেখানে আইনজীবীরা সওয়াল করার সময় বসেন, তার একটি আসনে বসেও পড়েন। চায়ের পেয়ালায় চুমুক দিতে দিতেই জেনে নেন, কী ভাবে সুপ্রিম কোর্টের এক নম্বর এজলাসে শুনানি চলে।
গত ২৫ নভেম্বর নরেন্দ্র মোদীর এই ‘অভূতপূর্ব’ নৈশ-সফর নিয়ে গত দু’সপ্তাহ ধরেই রাজধানীতে জোর জল্পনা। কারণ, গত ৬০ বছরে কোনও প্রধানমন্ত্রী সুপ্রিম কোর্টের ভিতরে যাননি। তার পরেই জল্পনা শুরু হয়, মোদী সরকার কি নতুন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর সঙ্গে সম্পর্কের উষ্ণতা বাড়াতে চাইছে? প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতির মধ্যে কী কথা হয়েছিল, তা নিয়েও জল্পনা চলছিল।
তা নিয়েই এ বার মুখ খুললেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ। তিনি নিজেও সে সময় ঘটনাস্থলে হাজির ছিলেন। তাঁর যুক্তি, ‘‘এটা কোনও ব্যক্তিগত সফর ছিল না। শুধু প্রধানমন্ত্রীই ওখানে হাজির ছিলেন, এমনটা নয়। আমি নিজে ছিলাম, অন্যান্য প্রবীণ বিচারপতিরাও সেখানে হাজির ছিলেন।’’
আরও পড়ুন: বিজেপির সমর্থন প্রস্তাব উড়িয়ে দিল টিআরএস
সুপ্রিম কোর্টের এজলাসে গিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছেন কি না, সেই প্রশ্নের সঙ্গে আর একটি প্রশ্নও উঠছিল রাজধানীর আলোচনায়। তা হল প্রধান বিচারপতি গগৈ কেন সেই সুযোগ দিচ্ছেন? রাফাল-চুক্তিতে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের দাবির মামলায় প্রধান বিচারপতি এখনও রায় ঘোষণা করেননি। সুপ্রিম কোর্টের ওই এক নম্বর এজলাসেই তার শুনানি হয়েছে। ওই মামলায় অভিযোগের আঙুল প্রধানমন্ত্রীর দিকেই। সে সময় এই সাক্ষাৎ ন্যায্য কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জোসেফের মন্তব্য, ‘‘এক জন দেশের প্রধানমন্ত্রী, অন্য জন প্রধান বিচারপতি। ওঁরা কি নিজেদের গণ্ডি বোঝার মতো যথেষ্ট পরিণত নন?’’ তাঁর যুক্তি, ‘‘কেউ যদি আলাদা ভাবে চুপি চুপি দেখা করেন, ঝুলে থাকা মামলা নিয়ে আলোচনা করেন, তা হলেই লক্ষণরেখা ভাঙা হয়। তা ছাড়া প্রধান বিচারপতি আমাদের বলেই দিয়েছেন, সরকারের শীর্ষ স্তরের সঙ্গে তিনি নিয়মিত কথা বলবেন।’’
আরও পড়ুন: দলই সংসার, পাঞ্চালী আছেন সাধারণ পথেই
ঠিক কী হয়েছিল ২৫ নভেম্বর?
ওই দিন দিল্লিতে বিমস্টেক-গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির বিচারপতিদের সম্মেলন উপলক্ষে নৈশভোজ আয়োজন করেছিলেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীও। নৈশভোজের পরে প্রধান বিচারপতির কাছে তাঁর এজলাস দেখতে চান মোদী। আচমকা এই অনুরোধ রক্ষা করতে অবশ্য বেগ পেতে হয়েছিল। এজলাসের তালার চাবির জন্য রক্ষীদের খোঁজাখুঁজি শুরু হয়।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জোসেফ বলেন, ‘‘নৈশভোজের পরে প্রধানমন্ত্রী ও অন্য দেশের বিচারপতিদের প্রথমে এক নম্বর এজলাস, তার পর প্রধান বিচারপতির লাউঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। এইটুকুই। একেবারেই রুটিন, সৌজন্যমূলক সফর।’’ বিজেপি নেতাদের আবার ব্যাখ্যা, আসলে মোদী এমনই। তিনি যেখানেই যান, সেখানকার সব কিছু ভাল করে দেখতে চান। প্রধান বিচারপতির এজলাস দেখতে চাওয়াটাও তারই অঙ্গ।