নরেন্দ্র মোদীর উপহার পাওয়া তরবারি। নিজস্ব চিত্র
নরেন্দ্র মোদীর মাথার পাগড়ি নিজের মাথায় পরতে চান?
নানা রঙের শাল বা উত্তরীয়? যেগুলো গলায় ঝুলিয়ে বক্তৃতা করেছেন মোদী, চাইলে সে রকম একটা নিজের গলাতেও ঝুলিয়ে ফেলতে পারেন। পাগড়ির সঙ্গে মানানসই একখানা নকশাদার জ্যাকেট কিংবা তরবারিও কিনে ফেলতে পারেন।
‘নোট বাতিলের জন্য অভিনন্দন’ বার্তা জানিয়ে তেলঙ্গানার বিজেপি বিধায়ক টি রাজা সিংহ লোধ একখানা ধাতব গো-মাতার মূর্তি উপহার পাঠিয়েছিলেন মোদীকে। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বিহারের রাজ্যপাল থাকাকালীন উপহার দিয়েছিলেন রূপোর লক্ষ্মী-গণেশের মূর্তি। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে গিয়েছিলেন মোদী। তখন তাঁকে কৃষ্ণনগরের শিল্পী রাম পাল ফাইবারের তৈরি চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তি উপহার দেন।
এর মধ্যে পছন্দসই জিনিসগুলি পেতেই পারেন আপনি। শুধু নিলামে যোগ দিয়ে দরদাম করে কিনে ফেলতে হবে।
গত পৌনে পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদী যে সব উপহার পেয়েছেন, এ বার তার মধ্যে থেকে ১৯০০ বাছাই করা উপহার নিলামে উঠছে। এত দিন এগুলো জমা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের তোষাখানায়।
মোদী সরকারের সিদ্ধান্ত, এই নিলামের টাকা খরচ হবে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার প্রকল্প ‘নমামি গঙ্গে’-র জন্য। ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি অব মডার্ন আর্টে এগুলি নিলাম হবে। অবিক্রিত স্মারকগুলি পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে নিলাম হবে। মূলত দেশের মধ্যে অনুষ্ঠানে পাওয়া উপহারই নিলামে উঠছে।
সরকারি সূত্র বলছে, নিয়ম অনুযায়ী এই সব উপহারের কোনওটাই প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সরকারি পদস্থ কোনও ব্যক্তি, তা সে প্রধানমন্ত্রীই হোন বা রাষ্ট্রপতি, কোনও অনুষ্ঠানে উপহার পেলে তা ৩০ দিনের মধ্যে তোষাখানায় জমা করতে হয়। তোষাখানার অফিসারেরা তার বাজারদর ঠিক করেন। এক হাজার টাকার কম দাম হলে উপহার তার মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার থেকে দামি উপহার নিজের জন্য রাখতে হলে, দাম মেটাতে হয়। তোষাখানার এই সব উপহার রাষ্ট্রপতি ভবন, প্রধানমন্ত্রী বাসভবন, সরকারি দফতর সাজানোর কাজে ব্যবহার হয়। সেই তোষাখানার সম্পত্তিই নিলাম করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে মোদী গঙ্গার স্রোত, জলের গতি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার পুরনো প্রকল্পের নাম বদলে ‘নমামি গঙ্গে’ চালু করেন। জলসম্পদ মন্ত্রকে গঙ্গার পুনর্জীবনের জন্য নতুন দফতরও যোগ হয়। কিন্তু চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রিপোর্ট দিয়েছে, ২০১৪ থেকে ২০১৮-র মধ্যে টাকা খরচ হলেও উত্তরাখণ্ডে গঙ্গার দূষণ আরও বেড়েছে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গে গঙ্গায় দূষণের মাত্রা একই থেকেছে।
কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, ‘‘মা গঙ্গা কি এখন দূষণমুক্ত? কেন্দ্রের রিপোর্ট কী বলছে?’’ কংগ্রেস নেতাদের অভিযোগ, যে গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে মোদী এখন তোষাখানা খুলে দিচ্ছেন, সেই গঙ্গার দূষণ নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তিনি একবারও দেখা করেনি।
গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার দাবিতে অনশন বসেছিলেন পরিবেশকর্মী জি ডি আগরওয়াল। গত অক্টোবরে ১১১ দিন অনশনের পর তাঁর মৃত্যু হয়। আগরওয়ালের মৃত্যুর পরে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, তিনি আগরওয়ালের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এর পরেও একাধিক পরিবেশকর্মী, সাধু একই দাবিতে অনশন করছেন। বিরোধীদের প্রশ্ন, সেই অস্বস্তি এড়াতেই কি গঙ্গার জন্য দরাজ হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?