ছবি: এএফপি।
কংগ্রেসের কোনও প্রধানমন্ত্রী কি এই কথাগুলোই বলতেন না!
প্রশ্নের মুখে কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলছেন, ‘‘আমি খুশি যে নরেন্দ্র মোদী ভারত ও পাকিস্তানকে হাইফেন দিয়ে জুড়ে দেননি। তিনি ভারতের বিশালত্ব, সাফল্য, সম্ভাবনা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের কথা বলেছেন।’’
শুধু কংগ্রেস নয়। কার্যত গোটা বিরোধী শিবির শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জে নরেন্দ্র মোদীর বক্তৃতার পর ‘বেকায়দায়’ বলে মনে করছেন অনেকেই। কারণ, তাঁদের মতে, গতকাল মোদী তাঁর পরিচিত অবতার থেকে বেরিয়ে প্রায় জওহরলাল নেহরুর পথ অনুসরণ করে সবাইকে নিয়ে চলা, সকলের জন্য উন্নয়নের কথা বলছেন।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা দেশের অবস্থানের একেবারে বিপরীত না হলে বিরোধীরা সাধারণত সমালোচনা করেন না। বিশেষত কংগ্রেস সেই নীতি বরাবর মেনে এসেছে। তবে এ বার তার থেকে কয়েক কদম এগিয়ে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির বক্তব্য, ‘‘মোদী ও ইমরান খানের মধ্যে তুলনাই চলে না। ইমরানকে দেখে মনে হয়েছে, তিনি সঙ্কীর্ণতায় নিমজ্জিত। ভয় পেয়ে হুমকি দিচ্ছেন। ভারত ও মোদী তাই সহজেই জিতে গিয়েছে।’’
এই সুযোগে অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে ‘প্রকৃত রাষ্ট্রনেতা’ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তথা বিজেপি সভাপতির দাবি, ‘‘প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত রাষ্ট্রনেতার মতো শুধু সৌভ্রাতৃত্বের বার্তাই দেননি, বিশ্ব জুড়ে শান্তি রক্ষায় ভারতের ভূমিকার কথাও স্মরণ করিয়েছেন। জন কল্যাণ থেকে জগতের কল্যাণের নতুন মন্ত্র বিশ্ব অনুসরণ করতে পারে।’’ বিজেপি নেতাদের দাবি, নরেন্দ্র মোদী নিজেকে এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রনেতার স্তরে নিয়ে গিয়েছেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আবার পাকিস্তানে প্রকাশিত একটি ব্যঙ্গচিত্রের উল্লেখ করে খোঁচা দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। বলেছেন, ‘‘উনি নিজেকে খোরাক করে তুলছেন।’’
পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মোদী প্রথম রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে গিয়েছিলেন। প্রতিবেশী দেশের নাম নিয়ে বলেছিলেন, পাকিস্তান সন্ত্রাস বন্ধ করে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করলে তিনি আলোচনায় বসতে রাজি। পাঁচ বছর পরে মোদী এ বার পাকিস্তানের নামই করেননি। পাক-প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন প্রায় যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে ফেলেছেন, তখন মোদী বিপরীত মেরুতে। পাকিস্তানের নাম না করলেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। সেই সঙ্গে স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতা উদ্ধৃত করে শান্তি ও সদ্ভাবনার বার্তা দিয়েছেন। কথা বলেছেন উষ্ণায়ন, জল সংরক্ষণ, প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করার মতো আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়ে। এখানেই মোদী ইমরানকে পিছনে ফেলে দিয়েছেন বলে কংগ্রেস নেতা মনু সিঙ্ঘভির মত।
মোদীর বক্তৃতার সমালোচনা না করলেও বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রীর কথায় ও কাজে ফারাক রয়েছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য নীলোৎপল বসুর বক্তব্য, ‘‘পাকিস্তান যা বলেছে, তার গুরুত্ব নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদী যা বলেছেন, তার সঙ্গে তাঁর কাজের ফারাক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১৩০ কোটি ভারতীয়ের জন্য তাঁর কাজের কথা বলছেন। প্রায় দু’মাস ধরে যে কাশ্মীরিরা ঘরে বন্দি, তাঁরা কি ভারতের নাগরিক নন? তাঁদের কি নাগরিক হিসেবে অধিকার নেই?’’
দেশের মাটিতে অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্নের মুখে মোদী সরকার। অথচ রাষ্ট্রপুঞ্জে তা কার্যত ধুলো ঝাড়ার মতো ফেলে দিয়ে স্বচ্ছ ভারত থেকে আয়ুষ্মান ভারতের সাফল্যের কথা শুনিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকে গত দু’মাস ধরে কাশ্মীরিরা কার্যত গৃহবন্দি। অসমে এনআরসি-কে ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রশ্ন উঠেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী তামিল কবি কণিয়ন পুঙ্গুন্ড্রনারকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, ‘সব মানুষই আমাদের আপন।’ বিরোধীদের প্রশ্ন, সবাইকে আপন ভাবলে বিজেপি নেতারা কেন বলছেন, অন্য দেশ থেকে আসা হিন্দুদের ভারতে জায়গা দেওয়া হবে, কিন্তু মুসলিমদের জায়গা হবে না!
পাকিস্তানের নাম না করে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপুঞ্জে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মানবতার জন্যই চ্যালেঞ্জ। কাশ্মীরি সমাজকর্মী শেহলা রশিদের প্রশ্ন, ‘‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মোদীর অবদানটা কী?’’ সমঝোতা বিস্ফোরণে অভিযুক্ত প্রজ্ঞা ঠাকুরের দিকে ইঙ্গিত করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘উনি একজন সন্ত্রাসে অভিযুক্তকে সাংসদ করেছেন।’’