—ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসে নরেন্দ্র মোদী একশো দিনের কাজের প্রকল্পকে ‘কংগ্রেসের ব্যর্থতার স্মারক’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে চাকরি তৈরি নিয়ে প্রশ্নের মুখে এখন সেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পকেই আঁকড়ে ধরেছেন মোদী। তাঁর সরকার বলছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পই রোজগার তৈরির অন্যতম উপায়!
চাকরি বা রোজগারের সুযোগ তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নানা প্রকল্প রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান তৈরি প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রী রোজগার উৎসাহ যোজনা, গ্রামীণ কৌশল যোজনা, শহরের জীবিকা মিশন। এ সব প্রকল্পে হয় নতুন চাকরি তৈরির জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে নানা সুবিধা দেওয়া হয়। অথবা স্বনির্ভর হওয়ার জন্য ভর্তুকিতে ঋণ, প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত হয়।
কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রক এখন সেই তালিকায় একশো দিনের কাজ বা ‘মনরেগা’-কেও যোগ করেছে। যাকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেই ‘গর্ত গোঁড়ার প্রকল্প’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন। রোজগার তৈরির খতিয়ান দিতে গিয়ে এখন শ্রম মন্ত্রক বলছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গত তিনটি আর্থিক বছরের প্রতিটিতে ২৩৫ কোটি করে শ্রম দিবস তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাইশ গজে হেরে গেলেন ‘মহাপুরুষ’ নমো
প্রধানমন্ত্রী মোদী ২০১৫-তে লোকসভায় দাঁড়িয়েই কংগ্রেস নেতৃত্বকে নিশানা করে বলেছিলেন, ‘‘আমার রাজনৈতিক বোধ বলে, মনরেগা কোনও দিন বন্ধ করা উচিত নয়। কারণ মনরেগা আপনাদের ব্যর্থতার জীবন্ত স্মারক। স্বাধীনতার ৬০ বছর পরেও আপনারা মানুষকে গর্ত খুঁড়তে পাঠিয়েছিলেন।’’
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রশ্ন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, মনরেগা কংগ্রেসের ব্যর্থতার স্মারক। শ্রম মন্ত্রক বলছে, মনরেগা মোদীর কর্মসংস্থানের কৌশল। মনরেগা তা হলে মোদীর স্মারক হয়ে গেল?’’ কংগ্রেসের প্রশ্ন, চাকরি নিয়ে প্রশ্নে চাপের মুখেই কি এই ভোলবদল? গরিব উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে ব্রিগেডের সমাবেশ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সদ্য বলেছেন, ‘‘দেশে চাকরিই নেই, তার আবার সংরক্ষণ!’’
আরও পড়ুন: এবার বিমল জালানও মুখ খুললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-সিবিআইয়ের অধিকার নিয়ে
লোকসভা ভোটের আগে মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল, প্রধানমন্ত্রী হলে তিনি বছরে ২ কোটি নতুন চাকরির বন্দোবস্ত করবেন। তা তো হয়ইনি। উল্টে নোট বাতিলের ধাক্কায় বহু মানুষের চাকরি গিয়েছে। ২০১৮-তেই ১ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে সম্প্রতি রিপোর্ট দিয়েছে সিএমআইই (সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি)। কত মানুষের চাকরি বা রোজগার হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কর্মসংস্থানের হিসেব প্রকাশ করাই বন্ধ করে দিয়েছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের মন্ত্রীরা অবশ্য বলছেন, চাকরি অনেক হয়েছে। ঠিক হিসেব নেই, তাই মালুম হচ্ছে না।
গ্রামে আর কোনও কাজ না জুটলেও, গরিব মানুষের জন্য ন্যূনতম রোজগার সুনিশ্চিত করতে ইউপিএ-সরকার মনরেগা-র পরিকল্পনা করে। বিজেপির নেতারা একে সনিয়া গাঁধীর ‘ঝোলাওয়ালা উপদেষ্টা’ ও বামপন্থীদের বুদ্ধি বলে কটাক্ষ করতেন। এখন সেই মনরেগা-কেই রোজগার তৈরির উপায় হিসেবে তুলে ধরায় অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, একে কী ভাবে নতুন রোজগার তৈরির রাস্তা বলা যায়? উল্টে একশো দিনের কাজের চাহিদা বাড়লে ধরে নিতে হবে, গ্রামে বা শহরে অন্য কাজ মিলছে না।
বাস্তবিকই মোদী জমানায় বছর বছর মনরেগা-য় বরাদ্দ বেড়েছে। ২০১৬-র নোট বাতিলের পরে কাজ হারিয়ে শ্রমিকেরা শহর থেকে গ্রামে ফিরেছিলেন। একশো দিনের কাজই হয়ে উঠেছিল ভরসা। তা সামাল দিতে ২০১৭-’১৮-র বাজেটে মনরেগা-য় বরাদ্দ ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪৮ হাজার কোটি টাকা করেছিলেন অরুণ জেটলি। চলতি আর্থিক বছরে বাজেটে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার পর, জানুয়ারিতে আরও ৬,০৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। সরকারের আশা, চলতি বছরেও ২৩৫ কোটির বেশি শ্রমদিবস তৈরি হবে।
অর্থনীতিবিদদের ব্যাখ্যা, গ্রামে-শহরে যে কাজের অভাব রয়েছে, মনরেগা-র কাজের বিপুল চাহিদা থেকেই তা স্পষ্ট। বাড়তি অর্থ ঢেলে তা সরকারকে সামাল দিতে হচ্ছে। রোজগার সুনিশ্চিতকরণের পক্ষে সামাজিক আন্দোলনকারী নিখিল দে-র যুক্তি, ‘‘বকেয়া মজুরি পাওনা, চালু কাজের খরচ, রাজ্যগুলির পাওনা মেটাতেই এই টাকা খরচ হয়ে যাবে। আগামী আড়াই মাসে নতুন কাজের জন্য অর্থ থাকবে না।’’